সিলেটে এখনো ১১ হাজার গৃহহীন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পরেও ১০,৮১০জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যাঁরা বাড়ি ফিরছেন, তাঁরা পড়েছেন মহামন্দায়। বাড়িতে গিয়ে দেখেন বাড়ি নেই। যদিও বা আছে, এটি বসবাসের অযোগ্য। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের দিকে তাকিয়ে আছে বানভাসি মানুষ।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সিলেট জেলায় ৪০ হাজার ৯১টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানভাসি মানুষ জানান, বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি। এর মধ্যে মাত্র ছয় হাজার বাড়ি নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ এই অনুদান পেয়েছেন। বাকিগুলো বরাদ্দের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবুর রহমান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলার অধিকাংশ এলাকায় পানি কম থাকায় লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছে। অপরদিকে সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম জানান, নিম্নাঞ্চলের পানি এখনো না কমায় হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ ৫ হাজার বাড়ি মালিককে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকার বরাদ্দ দিয়েছে ৬০ লাখ টাকা ও ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন। ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার বাড়ির মালিকের মধ্যে এসব টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি বাড়ির মালিককে ৬ হাজার টাকা ও ২ বান্ডিল ঢেউটিন দেওয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানিতে অনেক বাড়ির বেড়া ভেসে গেছে। কারো বেড়া আর টিনের চাল দুমড়ে মুচড়ে গেছে। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে অনেকের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। অনেকেই সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন না। অর্থের অভাবে অনেকেই বাড়িঘর তৈরি করতে পারছেন না। এ অবস্থায় অনেকেই গৃহহীন হয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান বলেন, সরকারের তালিকাভুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত সব ঘর আর্থিক সহায়তা পাবে। শিগগিরই জেলার কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় বাড়ি নির্মাণের জন্য ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসডিএফ)। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের বাড়ি নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।
অপরদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজ জানান, জেলার সব উপজেলায় বাড়ি মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হলেও মহানগরে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। . নির্দেশনা পাওয়ার পর তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
গত মে মাসে প্রথম দফা বন্যার কবলে পড়ে সিলেট। এরপর ১৫ জুন দ্বিতীয় বন্যা শুরু হয়। জেলার অন্তত ৩০ শতাংশ এখনও বন্যার কবলে রয়েছে।