লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা।ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন
লোহাগড়ে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও দোকান ভাংচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নগদ সহায়তা ও ঘর ঠিক করার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। এদিকে উপজেলার দিঘলিয়া বাজার ও সাহাপাড়া এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন মহল ও সংগঠন।
শনিবার নড়াইলের জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে নগদ অর্থ দেন। বাড়িটি সংস্কারের ব্যবস্থাও নেন তিনি। এ ছাড়া নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি ধৈর্য্যশীলদের সহযোগিতা কামনা করেন।
নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ধর্ম অবমাননার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। লোহাগড়ের ইউএনও আজগর আলী জানান, অভিযুক্ত যুবক পলাতক থাকায় তার হদিস জানতে তার বাবাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঘরবাড়ি ও মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
জানা যায়, দিঘলিয়া সাহাপাড়ার আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। এ সময় তারা দিঘলিয়া বাজারে ছয়টি হিন্দু দোকান ভাংচুর ও লুটপাট ও একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া সাহাপাড়ার পাঁচটি বসতঘর, আসবাবপত্র ভাংচুর ও নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।
এ ঘটনায় সাহাপাড়া ও আখড়াবাড়ী এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাড়ির অধিকাংশ মানুষই অন্যত্র পালিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির নারী ও শিশুরা আতঙ্কে ঘরের দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করছে।
গতকাল পৃথক বিবৃতিতে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা হামলার সঙ্গে জড়িত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় যেকোনো ধরনের উস্কানি ও সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও সরকার প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে বলে মনে হচ্ছে। এই সরকার দেশের বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। বরং বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে এসব ঘটনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মোশরাফা মিশু, মাসুদ রানা, ইকবাল কবির জাহিদ ও হামিদুল হক।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার এমপি পৃথক বাণীতে বলেছেন, হামলায় জড়িত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও সরকারের ব্যর্থতার কারণে বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এবং অতীতে হিন্দুদের উপর অত্যাচার। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বলেছেন, বর্তমান সরকার ও বিগত সরকারের কর্মকাণ্ড সমাজকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ অপর এক বিবৃতিতে বলেছেন, সারাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নিপীড়নের পরও সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে সরকারি দলের লোকজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অতীতে সংঘটিত একই ধরনের অপরাধের দ্রুত বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। দেশের ১৪টি জাতীয় সাংস্কৃতিক ফেডারেশন এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, অতীতেও একটি বিশেষ মহল গুজব ছড়িয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে।
রিপোর্টিং সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথ নাট্য পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সমিতি, বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদ এবং বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। হামলা-নির্যাতনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএএস (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাস।