সড়কে একদিনেই ২৮ জনের প্রাণ ঝরল
নওগাঁ ধামইরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তঞ্চের আলী (৬০)। অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক অসুস্থ ছিলেন। গতকাল শনিবার ছোট ছেলে ফজলে রাব্বি টগর তার বাবাকে চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি মিনি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তঞ্চার আলী চিকিৎসা নেয়ার আগেই সড়কে মারা যান। দুর্ঘটনায় চালকসহ তার ছেলে ও গাড়িতে থাকা এক আত্মীয়ও নিহত হয়েছেন।
শুধু এই পিতা-পুত্র নয়; গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন পঞ্চাশের বেশি। এর আগে শুক্রবার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ ১৪ জন নিহত হয়।
নিহত তঞ্চের আলীর জামাতা শরিফুল ইসলাম জানান, তঞ্চের আলী ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার ফলোআপ চিকিৎসার জন্য একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে ছেলে টগর ও বিজয় নামে এক আত্মীয় তাকে নিয়ে বগুড়া যাচ্ছিলেন। নিহত টগরের দুই বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
ত্রিশালে ট্রাকের ধাক্কায় তিনজন নিহত, অনাগত সন্তান বেঁচে গেছে: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কোর্ট ভবন এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ছয় বছরের মেয়ে নিহত,তারা হলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪২), তার স্ত্রী রত্না বেগম (৩২) ও মেয়ে সানজিদা আক্তার। মৃত্যুর প্রাক্কালে গর্ভবতী রত্না বেগম রাস্তায় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় রত্না। এরপর সাড়ে নয় মাস বয়সী শিশুটি পেট ফেটে বের হয়ে আসে। নবজাতকটি ময়মনসিংহের কমিউনিটি ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। নবজাতক ভালো আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন জানান, স্বামী জাহাঙ্গীর গর্ভবতী রত্নাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছিল। মেয়ে সানজিদাও ছিলেন সেখানে। পরিবারটি হাইওয়ে পার হওয়ার সময় ট্রাকটি তাদের চাপা দেয়।
মির্জাপুরে মহাসড়কে সাতজনের মৃত্যু: মির্জাপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মা, মেয়ে ও ছেলেসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন। গতকাল মহাসড়কের দুল্যা মনসুর ও পাকুল্যা এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। পাকুল্যায় দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। দুর্ঘটনাস্থলে আন্ডারপাস নির্মাণের দাবিতে তিন ঘণ্টার বিক্ষোভে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ডাঃ আতাউল গনি ও পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ঘটনাস্থলে যান। স্থানীয়দের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ২টার দিকে জনতা অবরোধ তুলে নেয়।
পুলিশ জানায়, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বারওয়াক পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস দুল্যা মনসুর এলাকায় একটি ভাঙা বালির ট্রাককে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই তিনজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজন মারা যান।
দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে সকাল ১১টার দিকে পাকুল্যা এলাকায়। ওই এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন উপজেলার বাশতৈল এলাকার মাসুদ মিয়ার পারভীন বেগম (৩৫), ছেলে সুমন (১০) ও মেয়ে সাদিয়া (৮)। পারভীন তার সন্তানদের নিয়ে উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের পানিশাইল থেকে তার স্বামীর বাড়ি বাস্তাইলে ফিরছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী বাস তাদের চাপা দেয়।
উল্লাপাড়ায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার দবিরগঞ্জ বাজারের কাছে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। দুপুর দেড়টার দিকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। নিহতরা হলেন- রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আতাবর রহমান মৃধার ছেলে আজিজুল ইসলাম (৪০), পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মিরাজ হোসেন (৩২), গাজীপুরের উধুনিয়া গ্রামের রায়হান আলী (৩৫) ও নাটোর সদরের মাসুদ রানা (৩২)। উপজেলায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রাকের চালক। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি লুৎফর রহমান জানান, নিহত যাত্রীরা আরপি পরিবহনের ঢাকাগামী কোচে ছিলেন।
হবিগঞ্জে ছাত্র নেতাসহ তিনজন নিহত: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার রুস্তমপুর টোল প্লাজা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হলেন- উপজেলার বেতাপুর গ্রামের ছাত্রদল নেতা এহিয়া চৌধুরী ওরফে জাবেদ (২৪), তার খালা বকুল বেগম (৫৫) ও অটোরিকশা চালক রাব্বান মিয়া (৪০)। অটোরিকশায় করে গজনাইপুর ইউনিয়নের শতক গ্রামে অসুস্থ এক আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছিলেন তারা। পথে ঢাকা থেকে সিলেটগামী মিতালী পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।