ছুটি শেষে শহরে ফেরার পথে ভোগান্তি
ঈদের ছুটি কাটিয়ে গ্রাম থেকে শহরে ফিরেছে লাখ লাখ মানুষ আগের দিনের মতো শনিবারও ভোগান্তিতে পড়েছেন। কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসা যাত্রীরা মহাসড়ক দুর্ঘটনা এবং যানজট, অসহনীয় গরম, বাস ভাড়া বৃদ্ধি, খোলা ট্রাক-পিকআপ, ফেরিতে অপেক্ষা করা এবং অতিরিক্ত ট্রেনের সময়সূচীর বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হন।
১০ জুলাই ঈদের পর গত মঙ্গলবার থেকে খুলছে অফিস-আদালত। পাঁচ দিন পর গতকাল রাজধানীর রাস্তাঘাট ফাঁকা। ধারণা করা হচ্ছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার শহরটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কাজেই কাজে ফিরতে গতকাল মহাসড়ক, ঘাট, লঞ্চ ও ট্রেনে নগরগামী যাত্রীদের ভিড় ছিল।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, বিগত দিনের মতো আজও যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। তবে সেতু থেকে ঢাকাগামী মহাসড়কের প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় দিনভর যান চলাচল ধীরগতি রয়েছে। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত ৭৭ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে ১০-১২ ঘণ্টা সময় লেগেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুটি পৃথক দুর্ঘটনায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঢাকার প্রবেশপথ গাবতলী, টঙ্গী, কাঁচপুরেও রাজধানীমুখী যানবাহনের তীব্র চাপ ছিল। পদ্মা সেতু দিয়ে আসা যানবাহনের চাপ ছিল হানিফ ফ্লাইওভারে। শনিবার দুপুর ১টার দিকে সয়দাবাদের চাঁনখারপুল, গুলিস্তান, সয়দাবাদ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। বাগেরহাট থেকে প্রাইভেটকারে আসা মনতাজুল হক জানান, আধা ঘণ্টা পদ্মা সেতু পার হওয়ার পর এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় যানজটে আটকা পড়েন তিনি। ফ্লাইওভারে দেড় ঘণ্টা যানজটে পড়েন হানিফ। যানজটের কারণে সুবিধা পাচ্ছে না পদ্মার।
ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট না থাকলেও তীব্র যানজট ছিল। পরিবহন সংকটের কারণে হাজার হাজার যাত্রী ট্রাক ও পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যাতায়াত করেন। ঢাকাগামী বাসের ভাড়াও ছিল বেশি।
ট্রেনেও দুর্ভোগ: ঈদের আগে যাত্রীদের চাপের কারণে ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে। ঈদের পর ট্রেনও ঢাকায় দেরিতে ফিরছে। নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ঢাকায় ফেরে ভোর সাড়ে ৫টায়। এটি আবার কমলাপুর থেকে চিলাহাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। গতকাল বেলা ১১টায়ও ট্রেন ফেরেনি। প্রায় সাত ঘণ্টা দেরি করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছায়। শনিবার দেরিতে রংপুর বিভাগের আট জেলার সব ট্রেন ঢাকায় ফিরেছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের আগে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় ছিল। এখন ঢাকা ফেরার ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা নেই। হাজার হাজার যাত্রী ছাদে উঠছেন। যে কারণে নির্দিষ্ট গতিতে ট্রেন চলছে না। যাত্রীদের নিরাপত্তায় ট্রেনগুলো ধীরগতিতে চলছে এবং গন্তব্যে দেরি করছে।
মোহনগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহগামী ট্রেনের যাত্রী নাজমুল ইসলাম জানান, উত্তপ্ত বগিতেও শতাধিক যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। রেলকর্মীরা টাকা দিয়ে এই যাত্রীদের তুলে নেয়। ট্রেনের ভেতরের তাপ ছিল অসহনীয়।
ঘাটে বাড়তি ভোগান্তি, নদী পার হয়ে বাস ভাড়া বেড়েছে : পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চে যাত্রী সংকট দেখা দিলেও বরিশাল ব্যুরো ও পটুয়াখালী প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল দুই শহরের মধ্যে।
দক্ষিণবঙ্গ থেকে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পদ্মা পারাপার যাত্রীরা আগের দিনের মতোই ভোগান্তিতে পড়েছেন। ফেরি পার হতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লেগেছে। নদীর ওপারে পাটুরিয়া পৌঁছতে গিয়ে দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট। ঢাকা বাসের ভাড়া ১৫০ টাকা হলেও বিভিন্ন পরিবহনের বাসে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৪০০-৬০০ টাকা। জনপ্রতি ১০০-১৫০ টাকায় ট্রাক ও পিকআপে যাত্রী তোলা হয়।