ইস্ট ওয়েস্টের ছাত্রী মহিমার পর সহপাঠী রাহাতও মারা গেলেন

0

ঈদের ছুটিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে পানাম সিটিতে বেড়াতে আসছিলেন বেসরকারি ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে আট সহপাঠী দুটি প্রাইভেটকারে থাকলেও কয়েকজন মোটরসাইকেলে ছিলেন। সফর শেষে সবাই সোনারগাঁয়ে সহপাঠী সুমাইয়া রহমান মহিমার বাসায় যাবেন বলে জানা গেছে। কিন্তু বাসের ধাক্কায় সব বন্ধুদের সামনেই প্রাণ হারান মহিমা, হাসপাতালে নেওয়ার পর গুরুতর আহত হয়ে রাহাতও মারা যান।

শুক্রবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দড়িকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস মহিমা-রাহাতগামী একটি প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়। এতে উল্টে গাড়িতে থাকা চার শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুপুরে মহিমাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত রাহাতকে শ্যামলীর ট্রমা সেন্টারে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আরও দুই সহপাঠী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

২২ বছর বয়সী মহিমা ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এবং রাহাত মাহমুদ বিবিএর ছাত্র ছিলেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে শিক্ষক, সহপাঠী ও স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মহিমার বাড়ি সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়ায়, থাকতেন ডেমরার সারুলিয়ায়। রাহাতের বাড়ি বাড্ডার লিংক রোড এলাকায়।

আরেক সহপাঠী আসিফ রাজ্জাক খান মহিমা ও রাহাতকে নিয়ে পানাম সিটিতে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সকালে রাজধানীর আফতাবনগর থেকে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে দুটি প্রাইভেটকার ও একটি মোটরসাইকেলে করে পানাম সিটি যাচ্ছিলেন। প্রাইভেটকারে মহিমা, রাহাত ও আনানসহ চারজন ছিলেন। অন্য একটি প্রাইভেটকারে তারা চারজন ছিলেন। মদনপুরের দড়িকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাওয়ার সময় মহিমাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। মহিমা ও রাহাতসহ আরও দুই সহপাঠী গাড়ির ভেতরে আটকা পড়ে। তারা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসিফ বলেন, চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক মহিমাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর তারা রাহাতকে ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যায়। ডাক্তার অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে চেক করে বললেন, রাহাতও মারা গেছে।

ট্রমা সেন্টারের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, দুপুরে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু পথে মারা যাওয়ায় তাকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হয়নি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মহিমার সহপাঠীরা বলছিলেন, মহিমার বাড়ি সোনারগাঁয়ে। তিনি এলাকা চেনেন। বলা হয়েছিল, পানাম সিটি ছাড়াও তারা আশেপাশের ঐতিহ্যবাহী এলাকা ঘুরে মহিমার বাড়ি যাবেন। কিন্তু সবাই একসঙ্গে আর ভ্রমণ করেননি।

মাহিমার বাবা মাহফুজুর রহমান মোগরাপাড়া এলাকার মা জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কাঁদতে কাঁদতে বাবা বললেন, একমাত্র মেয়ের মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছেন না। স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই মেয়েটি চলে গেল।

স্বজনরা জানান, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মহিমা সবার বড়। শুক্রবার সন্ধ্যায় মোগরাপাড়ার মাঝিপাড়া এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে মাহিমার দাফন সম্পন্ন হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ময়নাতদন্ত ছাড়াই মহিমার মরদেহ গ্রহণ করেছেন স্বজনরা। রাহাত নামে আরেক শিক্ষার্থীর লাশ মর্গে আনা হয়নি।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নবীর হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি (ঢাকা মেট্রো সি-11862) দ্রুতগতিতে সোনারগাঁয়ের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু সামনে একটি গাড়ি থাকায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে রাস্তার ডিভাইডারের ফাঁক দিয়ে ডান পাশে চলে যায়। এরপর ঢাকাগামী সৌদিয়া পরিবহনের বাসটি তাকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত বাসটি জব্দ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রাইভেটকারটিও পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *