পথে পথে চাঁদাবাজ, পশুহাটে লাঠিয়াল
রংপুর শহর থেকে ২৫ কিমি দূরে। বদরগঞ্জে যমুনেশ্বরী নদীর তীরে জমজমাট গরুর হাট। সোমবার রাত; ঘড়িতে ৯টা বাজে শুধু বাড়ি প্যারোলে। চারিদিকে জোরে চিৎকার, কোলাহল। ব্যস্ততার কারণে কেউ অবসর নেয় না। রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাইকারি বিক্রেতারা হাট থেকে পশু কিনে ট্রাকে লোড করছেন। চাটগাইয়া চালক জসিম মিয়া ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তার ট্রাকে ১৯টি গরু রয়েছে।
রিপোর্টের প্রয়োজনে ট্রাকের চালকের পাশে গরুর ব্যাপারী। পান চিবুতে চিবুতে জসিম মিয়া জিজ্ঞেস করলেন- মামা, রাস্তার কি অবস্থা? চাঁদাবাজ নাকি চাঁদাবাজ আছে? চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষায় চালক উত্তর দিলেন, ১০০ আর ৫০ টিয়ার নোডর বান্ডিল লইয়েরে বইয়ুন।টের পাইবেন।
পশুর ট্রাক চলছে। রংপুর শহরের বাইপাস সড়ক জুড়ে আধুনিক মোড়। বেশ কিছু গাড়ি আছে। ট্রাকগুলো রাস্তার একপাশে। দূর থেকে দুই যুবকের অঙ্গভঙ্গি। চালক গাড়ি না থামিয়ে জানালা দিয়ে দুটি ১০০ টাকার নোট ছুড়ে মারেন। খালি চোখে বোঝার উপায় নেই, কী হয়েছে! এরপর ভাঙা রাস্তা পার হয়ে রংপুরের পীরগঞ্জে এসে আবারও একই চিত্র দেখেন তিনি। টর্চলাইটের ইশারায় কথা বলছে। মনে হচ্ছে হাইওয়ে রেস্তোরাঁয় ডিনারের জন্য ডাকা হচ্ছে। আসলে তারা চাঁদাবাজ। সেখানে আপনাকে ৩০০ টাকা দিতে হবে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ট্রাকের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে ছুটে আসে তিনজন। জনপ্রতি ১০০ টাকা দিয়ে গাড়ি চলল। বগুড়া সীমান্তের মাটিডালি মোড়ে চালকের চোখে টর্চের আলো পড়ে। গাড়ির গতি কমাতে হয়েছে ৫শ টাকা। ট্রাকের ডিলার রফিক বলেন, চাঁদাবাজরা খুবই ভদ্র। গাড়ির কাছে আসে না। সব ইশারায় চলে। তবে টাকা ছাড়া পার হওয়ার সুযোগ নেই।
পথে যানজট ও চাঁদাবাজদের বাড়াবাড়িতে ব্যথিত চালক জসিম। ঘড়ির কাঁটা ৬টা বাজে। ট্রাক উত্তরা সেক্টর ১৬। সামনে যুবকের আনাগোনা। তিনি বলেন, উত্তরা সেক্টর ১৭ বৃন্দাবন থেকে উত্তরে বিজিএমইএ পর্যন্ত একটি খালি জায়গায় একটি কুঁড়েঘর বসে আছে। হাটের ইজারাদার নূর হোসেন মো. তিনি তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। এক যুবক বলেন, ‘এক কোটি ২০ লাখ টাকা ডাকছে মহাজনরা। হয় এখানে গরু রাখো, নয়তো ১০ হাজার টাকা দাও। চালক জসিমের সঙ্গে ঠিক কত টাকার সমঝোতা হয়েছে, তা জানা যায়নি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর এলাকায় ফাঁকা মহাসড়কজুড়ে খিলক্ষেত এলাকায় যানজট। পশু ট্রাক রাস্তা জুড়ে এলোমেলোভাবে সারিবদ্ধ. লাঠিসোঁটা নিয়ে এসব ট্রাকের সামনে দাঁড়ায় পঞ্চাশজন যুবক। তাদের মধ্যে কয়েকজন জোরপূর্বক একজনকে ট্রাক থেকে সরিয়ে দিচ্ছিল। ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ট্রাকগুলো বাজারে প্রবেশের চেষ্টা হয়েছে। আর ট্রাক না ঢোকালে দিতে হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।
চাঁদাবাজির ‘ভূত’ ঢাকা মহানগরীতে বেশি: