ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন তো দূরের কথা।বন্যা: ফের বৃষ্টির পূর্বাভাস

0

এক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যা কবলিত সিলেট ও ​​সুনামগঞ্জ জেলা পরিদর্শন করেন। সিলেট সার্কিট হাউসে মতবিনিময়কালে তিনি বন্যার্তদের তালিকা করে সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন। এরপর উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় তালিকা তৈরির কাজ শুরু করলেও কার্যত তা স্থবির হয়ে পড়ে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় তালিকা তৈরির কাজ এখনো শুরু হয়নি। বন্যা কবলিত এলাকায় পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়নি। মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসের বন্যার্তদের কেউ এখনো পুনর্বাসন সহায়তা পায়নি। ফলে সর্বশেষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা পাওয়া এখনো অনেক দূরের পথ।

বন্যার্তদের তালিকা তৈরির পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এরপর আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা অনুযায়ী সরকারি বরাদ্দ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে চলমান বন্যায় সিলেট জেলায় ৩০,৯৪০ পরিবার এবং মৌলভীবাজারে ১৪,০২০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হবিগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির কোনো তথ্য দিতে পারেননি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা। মঈন খান। এ কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। বন্যায় দেশের অন্যান্য অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকার পরিসংখ্যান চূড়ান্ত হয়নি।

যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার আগেই পানির উচ্চতা আবার বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বানভাসিবাসী। নতুন করে বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সোমবার রাত থেকে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিপদসীমার নিচে থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত পানির উচ্চতা ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে বৃষ্টি হওয়ায় সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজারে পানি উঠতে শুরু করেছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টির কারণে দোয়ারাবাজারের নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে। সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ক্রমশ কমলেও দুপুর পর্যন্ত হালকা বৃষ্টিতে উদ্বেগ বেড়েছে বন্যার্তদের।

সুনামগঞ্জের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, সোমবার থেকে ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি বেড়েছে। দোয়ারাবাজার ও ছাতক ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানি বের হওয়ার জায়গা না পেয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি নিচু এলাকায় প্রবেশ করেছে। তবে বন্যা পূর্বাভাস অনুযায়ী সুনামগঞ্জে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। আগামী কয়েকদিন সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো। স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নগরীর উপশহরের বাসিন্দা হোসেন আহমেদ জানান, বন্যার কবলে পড়ে তিনি পরিবার নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে ১০ দিন থাকার পর, তিনি বাড়িতে ফিরে দেখেন যে নীচের সমস্ত কিছু পানিতে ভেসে গেছে। দু-তিন দিন ধরে সব মুছে দিচ্ছে। এখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলেছে যে তারা আতঙ্কিত নয়। পাউবো জানায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানির উচ্চতা কমছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় শূন্য দশমিক ৮ সেন্টিমিটার পানি কমলেও বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কানাইঘাটের অমলসাইডে কুশিয়ারা নদীর পানি সর্বোচ্চ ২১ সেন্টিমিটার কমলেও বিপদসীমার ১ দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার ওপরে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, সুরমা নদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের খাসিয়ামারা ও চেলা নদীর পানিও বাড়ছে। ভারতের মেঘালয়ে ভারী বর্ষণের ফলে সীমান্ত নদীতে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সুরমা নদীর পানি বাড়ছে। এছাড়া খাসিয়ামারা ও চেলা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে হারে পানি বাড়ছে, এক ফুট বাড়বে তাতে বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাবে।

সরকারের মতে, বর্তমান বন্যায় রেমাইয়ের ৪,০৮৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *