আগে গেছে ধান, এবার ভিটা।বন্যা

0

সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের দুই পাশে এখন বানের টেউ। পেছনের রাস্তাটা শুধু বুকের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সামনে জৈন্তাপুরের ফতেহপুর। গ্রামের বাঁকে এখনো পানি বইছে। নৌকা ভর্তি করে আশেপাশের গ্রাম থেকে পুরুষ, মহিলা ও শিশুরা ফতেপুরে মহাসড়কের কাছে একটি ছোট অস্থায়ী ঘাটে নেমে আসছে। তাদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী গ্রাম বাটপাড়া, মাইজপাড়া, দত্তপাড়া বা মাঝেরটোলে।

কেউ আসছেন ত্রাণের আশায়, কেউ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন। ভুক্তভোগী অনেকেরই আশা মহাসড়কে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালে হয়তো স্বস্তি মিলবে।

গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশের পর থেকেই শঙ্কর দাস ও বাবুলী সরকারের মন মেঘে ঢাকা। তাদের বর্তমান ঠিকানা রাস্তার পাশে একটি ট্যাংঘরে। শঙ্কর আর বাবলী ত্রাণে তেমন মনোযোগ দেয় না। দুজনের চোখ স্থির ডুবে যাওয়া প্রিয় গ্রামের দিকে। অভিব্যক্তি নিজেই বলে, অনেক কষ্টে তাদের মুখে লেখা। তারা ফতেপুর থেকে গ্রামে প্রায় চার কিলোমিটার যাতায়াত করত। এখন সেই গ্রাম্য রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসে আছে। কোথাও কোথাও সড়কের অস্তিত্ব অনুভূত হলেও এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছে লাল ইটের কঙ্কাল। কেউ কেউ বনের টিনের চালার পানি নিয়ে মারামারি করছে, এই বলে ভিটেমাটি।

বাটপাড়া গ্রামের বদরুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো গ্রামে যে কয়টি উঁচু ভবন আছে তার মধ্যে একটি আমার আছে। বন্যা কবলিত ছয়টি পরিবার এখনো আমার বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। গোবিন্দ সরকার নামে আরেকজন বলেন, ‘১২ বিঘা ধান হারানোর পর এখন বাড়ি চলে গেছে। আগুনে পুড়ে গেলেও কিছু আছে। এবার অবস্থা আরও খারাপ। ‘

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেটের উপ-পরিচালক কাজী মজিবুর রহমান জানান, এ বছর সিলেট অঞ্চলে অল্প সময়ের মধ্যে তিনটি বন্যা হয়েছে। প্রথম বন্যা ৩১ মার্চ শুরু হয়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। দ্বিতীয় বন্যা ১০ মে শুরু হয়েছিল এবং ২২ মে শেষ হয়েছিল। ভয়ঙ্কর তৃতীয় বন্যা এখন চলছে। প্রথম বন্যায় বোরোর কুশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয় বন্যায় অনেকেই বাড়িঘরে উঠতে পারেননি। বন্যায় আউশের চারা ক্ষেতেরও ক্ষতি হয়েছে। এবার আউশের মাঠ চলে গেছে। তিনি বলেন, সিলেটে আট হাজার কৃষকের জন্য বরাদ্দ এসেছে। এতে ফসলের বীজ ও সার থাকে। পানি কম হলে প্রণোদনা দেওয়া হবে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম জানান, উপজেলার সবকটি পয়েন্টে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। স্বস্তি পেয়েও অনেকে অভিযোগ করছেন। এ ছাড়া এলাকার সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে কাজ চলছে। দু-একদিনের মধ্যে পেয়ে যাব।

ত্রাণের হাহাকার : সিলেটের জৈন্তার ছয়টি ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম এখনো পানির নিচে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কাছে এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অনেকের অভিযোগ।

এলাকা দিয়ে একটি গাড়ি যেতে দেখলেই এক ত্রাণকর্মী হাত নেড়ে তা থামানোর চেষ্টা করেন। সাংবাদিকরা গাড়িগুলো দেখলেও কেউ কেউ বিশ্বাস করেন তারা গাড়ি নিয়ে এসেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *