শুকনো জায়গা নেই। ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হলো লাশ

0

চারিদিকে পানি। লাশ দাফনের জন্য শুকনো জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে কলার ভেলায় মায়ের লাশ ভাসিয়ে দিল ছেলে। কিন্তু মায়ের লাশ দাফন করতে হবে। তাই লাশের সাথে একটি চিরকুট লিখেছিলেন। তাতে লেখা- ‘আমার মাকে শুকনো জায়গায় কবর দাও’। হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কাশ্মীর রেজা জানান, রোববার সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবারের সদস্যরা লাশ ভেলায় ভাসিয়ে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলেন।

লাশ পাওয়ার পর সহৃদয় ব্যক্তি দাফনের ব্যবস্থা করবেন বলে তাদের আশা।

এদিকে তাহিরপুরের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আহমেদ মুরাদ বলেন, লাশ ফেলার আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। তিনি জানান, নয়া নগর গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে রাব্বুল আলামিন (২৫) বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। শুকনো জায়গায় ছেলেকে দাফন করতে না পেরে বাবা-মা তাদের ছেলের লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেন।

 রোববার সকালে আজহারী সাইবার টিমসহ আমরা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর এলাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ ও বন্যার দৃশ্য পরিদর্শন করেছি। বিশ্বম্ভরপুর হাওরে রাইস টেক শেল্টারে যাওয়ার পথে আমরা সেই করুণ দৃশ্য দেখতে পাই। কলার ভেলায় লাশ পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন স্বজনরা। ওই লাশের সঙ্গে একটি চিরকুট দেওয়া হয়েছে। ছেলে তার মায়ের লাশ দাফনের আর্জি জানায়। তিনি আরও বলেন, হাওরে অমানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষের দাঁড়ানোর জন্য এক ইঞ্চি শুকনো জায়গাও নেই। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি।

হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, মধ্যনগর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও শাল্লা এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ। সেসব এলাকায় যাতায়াত করা খুবই কঠিন; তাই সেখানে ত্রাণ নিচ্ছেন না মানুষ। আর এক শ্রেণীর নৌকার মাঝি সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়িয়েছে। এক হাজার টাকার পরিবর্তে ১০ হাজার টাকা নিচ্ছেন তারা। ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ নৌকার মাঝিদের নৈরাজ্য দূর করতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাবিউর রহিম জাকির বলেন, আমার উপজেলার ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখানে কবরস্থান ডুবে গেছে। লাশ দাফনে বিব্রতকর অবস্থা- এটাই স্বাভাবিক।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, আমার এলাকার সব ইউনিয়ন ও গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কবরস্থানগুলো ডুবে গেছে। লাশ দাফন না করে দাফন করার তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *