রাজনীতি ও অর্থনীতির হিসাব মেলানোর চ্যালেঞ্জ

0

করোনার প্রভাবে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। অর্থনীতিতে তৈরি বাড়তি চাহিদা মেটাতেও প্রস্তুতি চলছিল। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু। বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনীতি হঠাৎ হোঁচট খেয়েছে। যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশে আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং অব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেটের কারণে ভোক্তা বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ পথ হারিয়েছেন। এদিকে, অর্থনীতির একটি বড় শক্তি প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স কমেছে। রপ্তানি খাত ভালো ছিল; কিন্তু এখন যুদ্ধ সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রপ্তানি আদেশ কমছে। বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার দাম কমেছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি সঙ্কুচিত হয়েছে। বাণিজ্য ও লেনদেনের ভারসাম্যের ঘাটতি স্মৃতিতে সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে। এসব সংকট কাটিয়ে ওঠাই অর্থবছরের বাজেটের

এমন প্রেক্ষাপটে আজ বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি মোস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট, রাজ্যের ৫১তম বাজেট এবং বর্তমান সরকারের ১৪তম বাজেট। এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘কোভিডের প্রভাব পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ফিরে আসা’। অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নতুন বাজেটে দেশের প্রান্তিক জনগণ এ কর্তৃত্ব পাবে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটি সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেট। সে জন্য সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং আগামী নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করার উদ্যোগ রয়েছে বাজেটে। বহুল কাঙ্খিত পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনাও থাকবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। এদিকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার কী করতে চায় তার বিবরণও থাকবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম ৭০ শতাংশ বেড়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে ১২ গুণ। সারের দাম বেড়েছে তিনগুণ। সয়াবিন তেল, গম ও চিনির দামও বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি পণ্যের ওপর আমদানি-নির্ভরতা রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এসব পণ্যের দাম প্রায় ৮০০ কোটি বেশি হবে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বাড়ছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মতে, বিশ্বব্যাপী খাদ্যমূল্য এ বছর বাড়তে থাকবে। আইএমএফের মতে, এ বছর উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি হবে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে করোনা পুনরুদ্ধার ব্যাহত হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমদানি-সংক্রান্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়া তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভর্তুকি প্রদান ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাড়ানো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখা, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বর্তমান পর্যায়ে রাখা, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সরকারের সামনের কয়েকটি চ্যালেঞ্জ।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাপী এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এরই মধ্যে মুদ্রাবাজার ও আর্থিক খাতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। লেনদেনের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারকে বিশাল ভর্তুকি দিতে হয়। তিনি বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া বিদেশে যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে তা নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা মোকাবেলা করাই হবে এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য বাজেট তৈরি করা হয়েছে। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে কম দামে পণ্য পেতে পারে তার উদ্যোগ থাকবে। সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সরবরাহ বাড়ানো হবে। নগদ সহায়তার সুযোগও বাড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে উৎপাদনশীল খাতে বিভিন্ন ছাড় ও প্রণোদনা ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। বিশেষ করে পণ্য বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *