তদারকি সংস্থা উদাসীন।সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি

0

দেশের রপ্তানি পণ্যের একশ শতাংশ সমুদ্রপথে ১৯টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে পাঠানো হয়। এসব ডিপো ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে। এই পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে তুলো এবং সেইসাথে বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ। দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য তৈরি পোশাকও রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প হিসেবে এই ১৯টি ডিপোকে শুল্ক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শর্তে লাইসেন্স দিয়েছিল। ডিপো থেকে পণ্য রপ্তানির দিকে কড়া নজর রাখছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কলকারখানা বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এই স্পর্শকাতর স্থাপনায় নিযুক্ত শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য দায়ী। এছাড়াও, বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের নিরাপদ সঞ্চয় ও পরিবহনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দায়ী। আইন আছে, নিয়ম আছে; কিন্তু এসব সংস্থা কখনোই তাদের দায়িত্ব পালন করে না। কখনো কখনো সব তদারকি সংস্থা রুটিন কাজ করে দায়িত্ব পালন করছে।

দুর্ঘটনা ঘটলেই মারধর শুরু করে। পরে তারা আবার হাইবারনেশনে চলে যায়। উদাসীন ভূমিকার কারণে শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা বাড়ছে। লাশের সংখ্যাও বাড়ছে।

ডিপোতে শত অনিয়ম, কাস্টমস দেখেন না : বেসরকারি ডিপো নির্মাণের আগে বন্দর থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে অনাপত্তিপত্র দিয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। তাদের পক্ষে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ডিপো বন্ডেড গুদাম ও কাস্টমস স্টেশনের সক্ষমতা পরিদর্শন করেছে। ডিপোটি কোথায় স্থাপন করা হচ্ছে, কীভাবে এটি পরিচালনা করা হবে এবং আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিচালনার সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স প্রদান করে। কিন্তু ইতিমধ্যে লাইসেন্সকৃত পণ্য রপ্তানি করা ১৯টি ডিপোর কোনোটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। শিপিং এজেন্ট অ্যান্ড ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন এর আগে ডিপো নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। তারপরও নতুন ডিপো হচ্ছে চট্টগ্রামে। তিনটি ডিপোর অনুমোদন প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন নীতি অনুসারে, নতুন ইনস্টল করা আইসিডিগুলি অবশ্যই শহরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত হতে হবে। নতুন আইসিডি স্থাপনের ক্ষেত্রে, আইসিডি নিজের জায়গায়, ভাড়া করা জায়গায় বা লিজ করা জায়গায় ইনস্টল করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৫ একর জমি এবং সাড়ে চার হাজার টিইইউএস কন্টেইনার থাকতে হবে। কিন্তু নতুন তিনটি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোও এ নীতি মানছে না।

নিয়ম মানেনি ১৯টি ডিপো: ৩৮ বছরে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি ডিপোগুলো নিয়ম মানেনি। নিয়ম অনুযায়ী কনটেইনার ডিপো হবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমপক্ষে ২০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু বন্দরের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে আটটি কনটেইনার ডিপো তৈরি করা হয়েছে। এগুলো হলো: এচক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, চিটাগাং কন্টেইনার লিমিটেড, কিউএনএস কন্টেইনার সার্ভিসেস লিমিটেড, ট্রান্স কনটেইনার লিমিটেড এবং কেএন্ডটি লজিস্টিকস লিমিটেড, সী ফার লিমিটেড, ফিসকো বাংলাদেশ লিমিটেড এবং লিমিটেড।

ছয় থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ওশান কন্টেইনার লিমিটেড, গোল্ডেন কন্টেইনার লিমিটেড, শফি মোটরস এবং ইনকনট্রেড লিমিটেড। অন্যান্য ডিপোগুলির মধ্যে, ইকবাল এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট লিঙ্ক লজিস্টিকস সেন্টার লিমিটেড এবং কেডিএস লজিস্টিকস লিমিটেড যথাক্রমে ১৪,১৫ এবং ১৯ কিলোমিটার দূরত্বে নির্মিত হয়েছে।

এসব ডিপোর মধ্যে পোর্টলিংক এবং সিসিটিএল ইউনিট-২ এখনো খোলা মাঠে আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্য স্টাফিং ও আনস্টাফিং করে থাকে। এচক ব্রাদার্স, সিসিটিএল ইউনিট ওয়ান ও টু এর ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখনো আধুনিকায়ন করা হয়নি। আবার অনেকে শুধু সীমানা প্রাচীর নির্মাণই নয়, কাঁটাতারের বেড়া দিয়েও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন। সর্বশেষ পরিদর্শন দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেএন্ডটি লজিস্টিকস লিমিটেডের পূর্ব পাশে কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। ওশান কন্টেইনার লিমিটেড, ফিসকো বাংলাদেশ লিমিটেড, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (ওয়েস্ট) এবং কিউএনএস – এই চারটি নিরাপদ সীমান্ত সীমানা নয়। আবার অধিকাংশ গুদামে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা নেই। সাত বছর আগের পরিদর্শন দলের সেই মূল্যায়ন চিত্র একই রয়ে গেছে। নিরাপত্তার দিক থেকে অধিকাংশ কনটেইনার ডিপোর ত্রুটি থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেগুলো মনিটরিং করে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বন্দরকে চার মাসে একবার মনিটরিং রিপোর্ট জমা দিতে হয়: রপ্তানিকৃত পণ্য সরাসরি কারখানা থেকে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে আনা হয়। সেখানে পণ্য যাচাই-বাছাই করে সরাসরি বন্দরে নিয়ে জাহাজে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ জন্য বেসরকারি ডিপোগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রতি চার মাস অন্তর চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দল ডিপো পরিদর্শন করে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু এই প্রতিবেদন নিয়মিত দেওয়া হয় না। আসল অনিয়ম উঠে আসে না। ১৯টি বেসরকারি ডিপোর অধিকাংশই নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন। কোনো ডিপোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরাপত্তারক্ষী নেই।

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুসারে, একটি সংস্থার প্রতিটি বিভাগে নিযুক্ত শ্রমিকদের কমপক্ষে  ১৮  শতাংশকে অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *