পরিবেশের পাঁজর ভেঙে দিচ্ছে ই-বর্জ্য
রাস্তার পাশে ছোট ছোট আবর্জনার স্তূপ। অসহ্য দুর্গন্ধ। পাশ দিয়ে যে হাঁটছে, আবর্জনার স্তূপের ভিতরে, আপনি অব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ব্যাটারি, চার্জার, সার্কিট, কম্পিউটার সরঞ্জাম, প্লাস্টিক এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স দেখতে পাবেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এই স্থানে প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের গাড়ি আসে। নোংরা বর্জ্য বহন করে। তবে আবর্জনার মধ্যে লুকিয়ে থাকা ই-বর্জ্য এখন আর আলাদা নয়। ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহৃত হয় না।
শুধু বছিলা নয়, শনিবার ঢাকার অন্তত পাঁচটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে ক্ষতিকর ইলেকট্রনিক্স মেশানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইন থাকলেও বাস্তবায়ন নেই। যদিও মুষ্টিমেয় কিছু কোম্পানি ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করার জন্য কাজ করছে, সরকার ১০০% বাস্তবায়নে তেমন মনোযোগ দিচ্ছে না। প্রণোদনা না থাকায় বিনিয়োগে আগ্রহ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতিতে নানা ধরনের রাসায়নিক থাকে। এসব রাসায়নিক মাটি ও পানিকে দূষিত করছে। নানাভাবে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা রোগের সৃষ্টি করছে। আপনি এখন ব্যবস্থা না নিলে, আপনাকে এর জন্য উচ্চ ফি দিতে হবে।
এমন প্রেক্ষাপটে ‘বৃক্ষজীবনে প্রকৃতি-পরিবেশ, আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গভবন কার্যত যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ রক্ষায় অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক প্রদান করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বছর বছর বাড়ছে ই-বর্জ্য: প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা। চাল থেকে চুলা- সব ক্ষেত্রেই মানুষ ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যত বেশি পণ্য ব্যবহার করা হয়, তত বেশি বর্জ্য বৃদ্ধি পায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সে বছর দেশে চার লাখ টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য জমা হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ রিসাইক্লিং শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাকি ৯৭ শতাংশ গেছে ভাগারে।
সেভ দ্য এনভায়রনমেন্ট মুভমেন্টের (পাউবা) সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, দেশে কোটি কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। প্রতি বছর এসব ফোনের ১৬-১৭ কোটি ব্যাটারি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে; মোবাইল সেট ও চার্জারও নষ্ট হচ্ছে। ফোনের কভার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এসব অনুপযুক্ত উপকরণ যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। আর ব্যাটারিসহ এসব উপকরণের ক্ষতিকর উপাদান পরিবেশের সঙ্গে মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
কী ধরনের ক্ষতি: এসডোরের গবেষণা বলছে, ই-বর্জ্যের কঠিন ধাতুর কারণে তিন কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসার অভাবে ৯৮ শতাংশ ই-বর্জ্য প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছে। যাতে পরিবেশ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, প্রকৃতিতে মেশানো ই-বর্জ্যের ৯৬ শতাংশই আশেপাশের ধাতু, সীসা, সীসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ও তামাকে বিষাক্ত করছে। সেই বিষ মানবদেহে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
নীতিমালা থাকলেও কোনো বাস্তবায়ন নেই: ই-বর্জ্যের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ বছর আগে। এত দিনে পরিবেশ অধিদপ্তর একটাই নিয়ম করেছে। গত বছরের জুনে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রক এটিকে ‘রিস্ক ওয়েস্ট (ই-ওয়েস্ট) ম্যানেজমেন্ট রুলস, ২০২১’ শিরোনামে জারি করে। এতে বলা হয়েছে, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে উৎপন্ন বর্জ্য উৎপাদনকারী বা সংযোজনকারীকে ফেরত দিতে হবে। ই-বর্জ্য ফেরত দেওয়ার সময়, গ্রাহক প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে অর্থ বা প্রণোদনা পাবেন। একইসঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী ১৮০ দিনের বেশি কোনো ই-বর্জ্য সংরক্ষণ করা যাবে না। পুরনো বা ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি করা যাবে না।