সময় বাঁচবে, দুর্ভোগ চিরতরে চলে যাবে
১০-১২ মিনিটেই পদ্মা সেতু পার হওয়া যায়। এখন ফেরিতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। যানজট, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সময় লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা। সেতুর ভাড়ার চেয়ে ফেরিতে ভাড়া পড়বে দেড় গুণ বেশি। সময় সাশ্রয় না হলে এবং ভোগান্তি না থাকলে এই অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে না। পদ্মা পারাপার যাত্রী, গাড়ির চালকরা এমন হিসাব-নিকাশ করছেন। তাদের মতে, যুগ যুগ ধরে যে দুর্ভোগ চলে আসছে তা চিরবিদায় ঘটতে যাচ্ছে।
পদ্মা সেতু পার হতে প্রাইভেট কারকে টোল দিতে হবে ৭৫০ টাকা। বর্তমানে ফেরিতে ৫০০ টাকা দিতে হয়। মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা সাগর হোসেন বলেন, ফেরিতে চড়ে নদী পার হতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। তার আগে ঘণ্টাখানেক সিরিয়ালে থাকতে হবে। আর ঈদ ও পূজার অপেক্ষার শেষ নেই। বৃষ্টি, ঝড়, কুয়াশায় ফেরি বন্ধ করে দিন চলে যায়। আমাদের দুঃখের রাত শেষ হতে চলেছে।
ফেরিতে বড় বাসের টোল ১ হাজার ৫৮০ টাকা। পদ্মা সেতুর টোল ২ হাজার ৪০০ টাকা। ফলে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১৫ থেকে ২৩ টাকা পর্যন্ত বাড়বে। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, টোল সমন্বয় করে জুনের মাঝামাঝি ভাড়া চূড়ান্ত করা হবে। পদ্মা সেতুর কারণে অনেক রুটের দূরত্ব কমে যাবে। ফলে ভাড়া কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
শুধু পদ্মা সেতু নয়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতেও। এর টোল রেট এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, এতে খরচ বাড়বে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় ও দূরত্ব কমিয়ে দিলে প্রকৃত খরচ বাড়বে না।
বিআরটিএর বর্তমান ভাড়া তালিকা অনুযায়ী ঢাকার গাবতলী থেকে যশোরের দূরত্ব আড়াইশ কিলোমিটার।৪০ সিটের বাসের ভাড়া ৫৭৩ টাকা ৭৫ পয়সা। পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি টোল ১,৯৫০ টাকা। যাত্রী প্রতি টোল ৬৭ টাকা সহ চূড়ান্ত ভাড়া ৬৪১ টাকা।
গাবতলী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর রুটের দূরত্ব ১৭৫ কিলোমিটার। ৭৫ কিলোমিটার রাস্তা কমে যাবে। ভাড়া কমবে প্রতি ৫০ কিলোমিটারে ১১৪ টাকা। পদ্মা সেতুর টোলে ভাড়া ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২৩ টাকা হবে। এক্সপ্রেসওয়ের টোলও ভাড়ায় যোগ হবে। ফলে ভাড়া বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দূরত্ব কমতে কমতে ভাড়াও কমতে থাকে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের ট্রেলারগুলো আগের চেয়ে কম সময়ে ও কম দূরত্বে ঢাকায় পৌঁছাবে। এটি সময় এবং শক্তি সাশ্রয় করবে, যা অতিরিক্ত ২,০০০ টাকা টোল অফসেট করবে।
পদ্মা সেতুতে বড় ট্রাকের জন্য টোল হবে ৫,০০০ টাকা এবং ছোট থেকে মাঝারি ট্রাকের জন্য ১,৬০০ থেকে ২,৬০০ টাকা। তারাও সময় ও দূরত্ব কমানোর সুবিধা পাবেন।