প্রতিবন্ধীদের আয়ের দিকে নজর শ্রমিক লীগ নেতার
শারীরিক প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ১৭ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর হাজারীবাগের শেখ রাসেল স্কুল এলাকা দিয়ে রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ একটি মোটরসাইকেলে থাকা দুজন তাকে থামায়। কিছুক্ষণ পর তারা রফিকুলকে ক্ষুর দিয়ে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করে। তাদের একজন বলছেন, ‘সায়রা এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।’ তিনি পাঁচবার হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনবার চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা গেছে, শুধু রফিকুল নয়, গত আট মাসে অন্তত চারজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ১০ বার হামলার শিকার হয়েছেন। কয়েকটি হামলায় তারা গুরুতর আহত হয়েছেন। ক্ষতস্থানে ২২টি সেলাই করতে হয়েছিল। একটি ঘটনায় একটি মামলা এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানায়, তারা প্রতিবন্ধী ঐক্য সমিতি নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সংগঠনটির সদস্য এক হাজার দুইশ ছাড়িয়েছে। অনুদান সংগ্রহের স্বার্থে সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় প্রভাবশালী একটি পক্ষ। কারণ বিনা বাধায় রিকশা চালানোর অনুমতি দেওয়ার নামে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করলেও। বিপুল সংখ্যক সদস্যের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২০০০ টাকা করে নিলেও ২৪ লক্ষ টাকা হবে। আর সুবিধাবাদী মহল শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষকেও ‘প্রতিবন্ধী’ দেখিয়ে মাসে অন্তত ৫০ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে।
প্রতিবন্ধীদের অভিযোগ, এই অপচেষ্টার পেছনে রয়েছে জাতীয় শ্রমিক লীগের ঢাকা জেলার সভাপতি এম এ হামিদ মুন্না। প্রতিবন্ধীদের সংগঠনের জন্য ২০ একর জমি বরাদ্দ দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু পল্লী’ নির্মাণের প্রলোভন দেখিয়েছেন তিনি। নেতাদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিজের পছন্দের কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব করেন তিনি। শাহরিয়ার বিদ্যুৎ নামের এক ব্যক্তি এ কাজের সঙ্গে জড়িত।
জানতে চাইলে এম এ হামিদ মুন্না বলেন, তিনি কোনো জায়গা দিতে চান না। আমি বলেছি, সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি জানালে সরকার জমি বরাদ্দ দিতে পারে। এখানে লোভনীয় কিছু নেই। তাদের কষ্ট লাঘবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমি যদি চাঁদাবাজি করতাম, আমি আমার প্রতিষ্ঠান থেকে করতে পারতাম। নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব হামলার কারণ হতে পারে। এতে আমার কিছু করার নেই।
শাহরিয়ার বিদ্যুৎ বলেন, তিনি গণকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার। পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছেন। তিনি প্রতিবন্ধী ঐক্য সমিতি ও জাগরণী নামে দুটি সংগঠন গড়ে তোলেন। সংগঠন বা হামলার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। লাইনম্যান বা অন্যদের সম্মানী না দেওয়ায় প্রতিবন্ধী রিকশাচালকদের ওপর হামলা হতে পারে।
তবে দাবি প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবন্ধী ঐক্য সোসাইটির সভাপতি আল মাহমুদ হোসেন বলেন, আমাদের সংগঠনকে রেজিস্ট্রেশন করা ও বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার জন্য বিদ্যুৎ আমাদের সংগঠনকে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। বিনিময়ে তিনি সংগঠনের নেতৃত্ব দিতে চাইলেও আমরা রাজি হইনি। মূলত তিনি ও শ্রমিকলীগ নেতা এম এ হামিদ মুন্না প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন।
হামলার যত ঘটনা : আট মাস আগে সংগঠনটির নেতা আল মাহমুদ হোসেনের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে এ ধরনের ঘটনার সূত্রপাত। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের এক নম্বর গেট এলাকায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় তার। এরপর চার-পাঁচজন তাকে ছুরিকাঘাত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার শরীরে ২২টি সেলাই দেওয়া হয়।
এদিকে রফিকুলের ওপর হামলার দিন দুপুর ১টার দিকে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এলাকায় সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনকে মারধর করে অজ্ঞাত দুই যুবক।