৪০ এতিম কন্যার জন্য বিবাহোত্তর সংবর্ধনা
৪০ বর ৪০ কনে একসাথে. তারা পাশাপাশি বসে আছে। অতিথিরা অন্য পাশে বসে আছেন। নবদম্পতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সবাই হাত তুলে দোয়া করছেন। যারা কনে সেজেছেন তারা সবাই এতিম। বরযাত্রীদের কেউ গার্মেন্টসে, কেউ বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন। অনেকে আবার কৃষি কাজ করে। যৌতুক ছাড়াই তাদের বিয়ে হয়। শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ীর গ্রিনভিউ কমিউনিটি সেন্টারে গণবিবাহ সংবর্ধনার দৃশ্য ছিল এমনই।
ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগটি নিয়েছে দিনাজপুর শিশু নিকেতন (এতিমখানা)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী জয়নুল আবেদীন, দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামীম, শিশু নিকেতন স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি মোজাফফর আলী মিলন প্রমুখ। সংবর্ধনা শেষে বরকে একটি সাইকেল, কনেকে একটি সেলাই মেশিন ও গৃহস্থালি সামগ্রী দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে কথা হয় কনে ইয়াসমিন আরার সঙ্গে। পার্বতীপুর জেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের আব্দুস সাত্তারের সাথে তার বিয়ে হয়। “নিকেতনে আমার শৈশব জীবন শুরু হয়েছিল তখন আমি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি,” তিনি বলেন। ইতিমধ্যে ৯ বছর পেরিয়ে গেছে। আমি এখান থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, এবার বিয়ে করলাম। শিশু নিকেতন আমাদের মায়ের আদলে তৈরি। কর্তৃপক্ষের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। এই সুযোগ না পেলে এতদূর আসতে পারতাম না। আমাদের জন্য প্রার্থনা কর; আমরা যেন আমাদের বাকি জীবন সুখে কাটাতে পারি।
তার স্বামী বলেন, এটা শিশু নিকেতনের একটি মহৎ উদ্যোগ। আমি কৃষি কাজ করে সংসার চালাই। দোয়া করবেন আমাদের সংসার জীবন সুখের হোক।
শিশু নিকেতনের সভাপতি মোজাফফর আলী মিলন জানান, ১৯৮৯ সালে ১০ জন এতিম মেয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে এতিমদের বিভিন্ন কাজে দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি তাদের HSAC পর্যন্ত শিক্ষিত করানো হয় এবং ১৮ বছর বয়সের পর কোনো যৌতুক ছাড়াই তাদের বিয়ে হয়। এর আগে ২০১৯ সালে, ২০ জন এতিম মেয়ের একসঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। এরপর করোনার কারণে অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ৪০ জন এতিম মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা সবাই সহায়ক। এর মাধ্যমে ১৭৪ জন মেয়েকে উপযুক্ত বিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে এখানে আরও ১০৮ জন মেয়ে রয়েছে।
হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, এতিমদের সহায়তায় সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। আজ যাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে তাদের চাকরির প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করা হবে।