কর্পোরেট করহার কমছে

0

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কর্পোরেট করের হারও কমানো হচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কত পরিমাণ কমানো হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত দুই অর্থবছরের মতো ভবিষ্যতে ২.৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছে। তবে এনবিআরের প্রস্তাবের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন অর্থ বিভাগসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতরা। তারা হ্রাসের হার পরিবর্তন করা যেতে পারে কিনা তা পর্যালোচনা করার পরামর্শ দেয়। সে কারণে করপোরেট কর হার কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

এদিকে, কর্পোরেট করের হার কমানো হলেও, ট্যাক্স বিরতির মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পে সুরক্ষায় কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর প্রতিযোগিতা খোলার প্রস্তুতি হিসেবে এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। জানা গেছে, এ প্রক্রিয়া শুরুর অংশ হিসেবে আগামী বাজেটে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত স্থানীয় কিছু শিল্পের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হবে। তবে, এনবিআর সহজ কর নিষ্পত্তি এবং মামলায় জড়িত ফি প্রদানের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

গত দুই অর্থবছরে করপোরেট কর কমানো হয়েছে আড়াই শতাংশ এবং মোট ৫ শতাংশ। নতুন অর্থবছরেও একই হার কমানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর। এনবিআরের প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে অর্থ বিভাগ।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাড়বে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। ফলে রাজস্ব চাহিদাও বাড়বে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরে করপোরেট কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করার পক্ষে অধিদপ্তর। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, গত দুই অর্থবছরে করপোরেট করহার কমলেও খাত থেকে রাজস্ব আদায় কমেনি।

যেসব ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ করা যেতে পারে: এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, দেশের কিছু শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা এখন বিশ্বমানের। এসব শিল্প পণ্য উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে রপ্তানি হচ্ছে। এলডিসি থেকে বাংলাদেশে উত্তরণ ঘটবে ২০২৬ সালে। তখন কর ছাড়ের মতো স্থানীয় শিল্পকে রক্ষা করা যাবে না। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানকে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হয়। এ কারণে কর অব্যাহতির মাধ্যমে এসব কোম্পানিকে যে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে তা তুলে নিয়ে বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি হিসেবে এখন থেকে সামান্য কর আরোপের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে স্থানীয় শিল্প সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কর অব্যাহতি রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি করে; একই সঙ্গে রপ্তানি বহুমুখীকরণে বাধা। কিন্তু পুরো বিশ্ব এখন এক ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এনবিআরের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে কি না, তা সিদ্ধান্ত নেবেন সরকারের শীর্ষস্থানীয়রা।

উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাপেক্ষে যে পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে: এলইডি টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, মোবাইল ফোন, ফ্যান, খেলনা, খেলনা ইত্যাদি সহ বিভিন্ন গৃহস্থালীর ইলেকট্রনিক্স পণ্য। বর্তমানে কোন ভ্যাট নেই। এই পণ্য উত্পাদন পর্যায়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে। দেশে প্রতি বছর চার কোটির বেশি মোবাইল ফোন উৎপাদিত হয়। ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স, ওয়ালটন ও এডিসন গ্রুপের মতো কোম্পানিগুলো দেশে স্মার্টফোন উৎপাদন করছে। বৃহৎ বাজার ও সরকারি প্রণোদনার কারণে দেশেই নকিয়া, ভিভো, ওপ্পো এবং শাওমি ব্র্যান্ডের ফোন তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও বেশ কিছু স্থানীয় ব্র্যান্ডের রেফ্রিজারেটর এবং এয়ার কন্ডিশনার রয়েছে। এছাড়াও এলইডি টেলিভিশন, ফ্যান, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল তৈরিতেও বেশ কিছু কোম্পানি এগিয়েছে।

এনবিআরের জরিপ অনুযায়ী, স্থানীয় শিল্পের জন্য কর অব্যাহতির পরিমাণ জিডিপির ২ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ ধরনের ছাড় না থাকলে কর-টু-জিডিপি অনুপাত বাড়ত। জিডিপির অনুপাতে সবচেয়ে কম কর সংগ্রহকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের কম। ভারতে তা প্রায় ২০ শতাংশ। পাকিস্তানে এই অনুপাত অনেক বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *