কুমিল্লা সিটি নির্বাচন।আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইমরান অনড়

0

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (চুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীতা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মতে, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরফানুল হক রিফাতই দলের একমাত্র প্রার্থী। দলটির তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান পদত্যাগ করবেন। বৃহস্পতিবার তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। তিনি এ বক্তব্য মানতে নারাজ। মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচনের মাঠে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।

মঙ্গলবার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থীর বোন এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের প্রায় এক ঘণ্টা পর আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, কুসিক নির্বাচন ঘিরে জটিলতা কেটে গেছে। আরফানুল হক রিফাত আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নৌকার পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। বৃহস্পতিবার তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন ঠিক উল্টো কথা। তিনি বলেন, “মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে ডেকেছেন। কথা বলেছি। আমি আমার বক্তব্যও দিয়েছি। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের কথা শুনেছি। এখন কুমিল্লায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলব।” নেতা-কর্মীরা।পারিবারিক সিদ্ধান্তও আছে।তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব।গত রাতে কুমিল্লায় ফিরে তিনি নেতা-কর্মীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ জানান।

এদিকে বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা জানান, মাসুদ পারভেজ খান ইমরান ও আঞ্জুম সুলতানা সীমা কুসিক নির্বাচন ও দলীয় মনোনয়নসহ নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। এ সময় কুসিকের গত দুই নির্বাচনে দলের একাংশের বিরোধিতার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। বৈঠকে তারা বলেন, তাদের পিতা আফজাল খান কুমিল্লার মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাবার মতো তারাও সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু দলের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রের কারণে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও গত দুই নির্বাচনে জয়ী হননি তারা। তবে এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের পরিবারের ছিল না। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কুমিল্লা মহানগরবাসীর অনুরোধে প্রার্থী হন মাসুদ পারভেজ খান ইমরান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন আফজাল খান ও কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য এ কিউ এম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে পরস্পরের বিরোধিতা করে আসছেন। আফজাল খানের মৃত্যুর পরও তা শেষ হয়নি। পারিবারিক সূত্রে আফজাল খানের মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও তার ছেলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন একিউএম বাহাউদ্দিন বাহার। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরফানুল হক রিফাত এ কিউ এম বাহাউদ্দিন বাহারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছেন। এ কারণে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পর থেকে আরফানুল হক রিফাতের সঙ্গে তার দূরত্ব বেড়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। এবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন একিউএম বাহাউদ্দিন বাহার ঘরানার আরফানুল হক রিফাত। তাকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান। তিনি আওয়ামী লীগের কাছে পরাজিত হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *