অর্থ পাচার বাড়ার আশঙ্কা।ডলারের অবৈধ বাজার
খোলা বাজারে ডলারের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ফলে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম দ্রুত বেড়েছে। সাম্প্রতিক কর্পোরেট কেলেঙ্কারির ফলে এই বিশেষত্বের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া দাম আরও বাড়বে এমন আশায় অনেকেই ডলার কিনছেন। মানি লন্ডারিংয়ের জন্য আমদানির ওভার ইনভয়েসিংও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আগের দিন খোলা বাজারে ১০২ টাকা লাফানো ডলারের দাম গতকাল কিছুটা কমেছে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। তবে ব্যাংকে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের হার অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে শেয়ারবাজারের মতো অনেকেই এখন লাভের আশায় ডলার বিনিয়োগ করছেন। ব্যক্তি পর্যায়ে এভাবে বিনিয়োগ করা বেআইনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বাংলাদেশেও ডলারের দাম বেড়েছে। তবে খোলাবাজারে ডলারের দর ও আন্তঃব্যাংকের হারের মধ্যে পার্থক্যের অন্যতম কারণ হুন্ডির দাম বৃদ্ধি।
তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে প্রাপ্ত রেমিটেন্সের পরিমাণ প্রায় অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে প্রাপ্ত পরিমাণের সমান। পুঁজি পাচারকারীরা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ডলার কেনে। বিভিন্ন উপায়ে ধার করা অর্থ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সাধারণত এইভাবে পাচার করা হয়। এছাড়া আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেও অর্থ পাচার করা হয়। আমরা যদি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই তবে দুর্নীতি বন্ধ করা এবং ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এছাড়া আমদানি-রপ্তানি ঠিকঠাক চলছে কি না, তা তদারকি বাড়ানো দরকার।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে দুই বছরের স্থবিরতার পর বিশ্বব্যাপী চাহিদা বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বেশিরভাগ পণ্যের দাম আরও বাড়ছে। আগের তুলনায় একই পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে এখন বেশি ডলার খরচ হচ্ছে। যে কারণে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিটেন্সের মধ্যে ১৪ হাজার কোটি ডলারের ব্যবধান রয়েছে। বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগ এই ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া বাজারের চাহিদা মেটাতে চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি করেছে।
সাউথ বেঙ্গল এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ডলারের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি আনঅফিসিয়াল চ্যানেলে পেমেন্ট বৃদ্ধিও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। এ ছাড়া ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে বলে একাংশ মনে করছেন। এজন্য তারা শেয়ার বাজারের মতো ডলারে বিনিয়োগ করছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা স্থবিরতার পর বৈশ্বিক ব্যবহার বেড়েছে। এদিকে যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। এতে চাহিদার সঙ্গে যোগান ঘাটতিও বেড়েছে। সাধারণত অফিশিয়াল চ্যানেল এবং আনঅফিসিয়াল চ্যানেলের মধ্যে ডলারের দামে ২ থেকে ৩ টাকার পার্থক্য থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবধান প্রসারিত হওয়ায় ব্যাংকগুলিও হার বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে।