পিকে হালদারের দুর্নীতিতে পাঁচ প্রভাবশালীর নাম।পিকের বক্তব্যের চেয়েও বেশি তথ্য দুদকের হাতে

0

অনিয়ম, দুর্নীতি ও হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ভারতে পিকে হালদারের গ্রেপ্তার। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তাই ছিলেন তার মহান ক্ষমতা ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতার উৎস।

জানা গেছে, বেসরকারি খাতের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি পিকে হালদারের অবিশ্বাস্য প্রতারণার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এখন পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। সহযোগী হিসেবে আরেক ব্যবসায়ী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেলের (মৃত) নামও জানতে পেরেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই রাঘববোয়ালকে খুঁজে পেতে দুদকের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার দুর্নীতির মূল সহযোগীদের ফাঁস করতে চায় দুদক।

পিকে হালদার, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রাক্তন এমডি এবং দুদকের ৩৫টি মামলায় অভিযুক্ত, ভারতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা ১৪ মে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লিজিং, ফাস ফাইন্যান্স, থেকে প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। পিপলস লিজিং ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ৩৫টি মামলায়।

দুদকের তদন্তে পিকে হালদারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার উৎস হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর, এসএম মনিরুজ্জামান ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের নাম এসেছে। তদন্তে শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেটের পরিচালক (অর্থ) আরেফিন শামসুল আলামিনের নামও রয়েছে।

জানা গেছে, এরই মধ্যে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে পিকে হালদার তার দুর্নীতির পেছনে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। দুদক জানিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছ থেকে তার বক্তব্য সংগ্রহ করা হবে।

দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পিকে হালদারকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তারা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম কেন কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।

জানা গেছে, দুদকের মামলায় গ্রেফতার হওয়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশেদুল হক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পিকে হালদারের ক্ষমতার উৎস হিসেবে এসকে সুর ও শাহ আলমকে উল্লেখ করেছেন। বিবৃতিতে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক দুই কর্মকর্তার সঙ্গে পিকে হালদারের বন্ধুত্ব এবং তাদের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য দেন।

তিনি বলেন, পিকে হালদারের প্রতি তারা সবসময় সদয় ছিলেন। এর বিনিময় মূল্যও ছিল অনেক। এ দুই কর্মকর্তা আত্মসাতের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বে ছিলেন। পিকে হালদারের একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ পাচারের সময় শাহ আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিএফআইএম (ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড মার্কেটিং) এর জিএমের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পান। আন্তর্জাতিক লিজিং থেকে শাহ আলমকে প্রতিমাসে ২ লাখ টাকা বেতন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ বছরে দুইবার আন্তর্জাতিক ইজারা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিদর্শন করে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পিকে হালদার সেই রিপোর্ট নিজের মত করে তৈরি করতেন।

পিকে হালদারের বিরুদ্ধে একটি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩৪টি মামলা মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তাধীন। এর মধ্যে কিছু মামলার চার্জশিট পর্যায়ে আবার কিছু নতুন মামলা প্রস্তুত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *