ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়েছেন এবং বাজার ভোজ্যতেলে ভরে গেছে

0

ঈদের আগে ও পরে বাজারে ভোজ্যতেল ছিল ‘ডুমুরের ফুল’। ক্রেতারা সয়াবিন তেল খুঁজে পাচ্ছেন না। গত বৃহস্পতিবার রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও কয়েকদিন ধরে বাজারে কৃত্রিম সংকট ছিল। কারসাজির কারণে ক্রেতাদের ভোগান্তির পর সোমবার ভোজ্য তেলে বাজার ভরে যায়। খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের পাশাপাশি এক, দুই ও পাঁচ লিটারের বোতলের কোনো অভাব নেই। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, তেজকুনিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম বাড়াতে এতদিন তেল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন দাম বাড়িয়ে গুদাম থেকে তেল সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের নজরদারি না থাকায় সাধারণ মানুষের পকেট কাটার সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা।

সয়াবিন তেল কিনতে হাতিরপুল বাজারে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিব উল্লাহ। তিনি বলেন, পাঁচ-ছয় দিন কোনো তেল পাননি। কিন্তু রেকর্ড দাম বাড়ার পর এখন বাজারে তেলের কোনো ঘাটতি নেই। কার্যকর সরকারি পদক্ষেপের অভাবে ব্যবসায়ীরা এমন অনৈতিক সুযোগ নিয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

তেজতুরীবাজার এলাকার একটি দোকান থেকে এক লিটারের বোতল সয়াবিন তেল কেনেন গৃহবধূ শাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘তেলের দাম একযোগে অনেক বেড়েছে। এখন এক হাজার টাকায় পাঁচ লিটার তেল কেনার সামর্থ্য নেই। তাই বাধ্য হয়ে এক লিটার কিনতে হয়েছে।

বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় দেশে সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার অ্যান্ড ভেজিটেবল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ৩৮ টাকা ও পাম তেলের দাম ৪২ টাকা বেড়েছে। ফলে খোলা সয়াবিন তেলের দাম এখন প্রতি লিটার ১৮০ টাকা। সয়াবিন তেলের এক লিটারের বোতলের দাম ১৯৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৯৮৫ টাকা। এছাড়া পাম তেলের নতুন দাম লিটার প্রতি ১৭২ টাকা। গত শনিবার থেকে এই নতুন হার কার্যকর হয়েছে।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ার ভয়ে ডিলাররা এতদিন ধরে ভোজ্যতেল আটকে রেখেছেন। অন্যদিকে মিলাররাও কম তেল সরবরাহ করেছে। দাম বৃদ্ধির পর এখন দুই দিনে তেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে ডিলার ও মিলাররা। কিন্তু ক্রেতারা এখন পাঁচ লিটারের বোতলের চেয়ে এক ও দুই লিটারের বোতল খুঁজছেন।

কারওয়ান বাজার রামগঞ্জ জেনারেল স্টোরের মালিক মো. জাকির বলেন, ঈদের আগে ডিলারদের তেলের জন্য বার বার ঘুরতে হয়। আপনি যদি পাঁচ কার্টন তেলের অর্ডার দেন, আপনি একটি কার্টন দিতেন। তেল না থাকায় মাঝে মাঝে বিদায় জানাতেন। এখন তারা যা আদেশ করবে তাই দিতে রাজি।

টিকে গ্রুপের পরিচালক সাফিউল আতহার তসলিম জানান, সংকট সত্ত্বেও বাজারে টিকে গ্রুপের পুষ্টি ব্র্যান্ডের তেল সরবরাহ করা হয়েছে। এখনো চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে। সব কোম্পানির বোতলজাত তেল দু-একদিনের মধ্যে বাজারে পৌঁছে যাবে। কোনো সংকট হবে না।

সোমবার ডেমরার কাজলা ব্রিজ এলাকায় ভোক্তা অধিদফতর ও র‌্যাব-৩ যৌথভাবে এ অভিযান চালায়। অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের প্রধান মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান।

অভিযানের পর অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, মেসার্স অদিতি ট্রেডিং, মেসার্স, সিফাত ট্রেডিং ও মেসার্স। কাজলা ব্রিজ এলাকায় মিন্টুর দোকানে আগের দামে ২৯ হাজার ৫৬০ লিটার খোলা পাম ও সয়াবিন তেল লুকিয়ে রাখা হয়েছে। অভিযানে এসব তেল উদ্ধার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *