লাইনে মিলছে না ‘লম্বা হাতে’-হাজারো টিকিট।ট্রেনে ঈদযাত্রা
সাধারণ যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পেলেও তদবিরের মাধ্যমে ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন ‘ক্ষমতাশালীরা’। রেলওয়ে সূত্র জানায়, মন্ত্রী-সচিবের কার্যালয় থেকে ‘হাজারো’ টিকিট নেওয়া হয়েছে। যার বেশির ভাগই এসি ও কেবিনের টিকিট। এত উদার বণ্টনে রেলকর্মীরা নিজেরাই তাদের কোটার টিকিট পাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রেলওয়ে ধারণা দিয়েছেন যে অন্তত ১৫-২০ শতাংশ টিকিট লবিং করা হয়েছে। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী ও সচিবের বক্তব্য জানতে পারেনি।
রেল ভবনের একাধিক কর্মকর্তার মতে, ‘মন্ত্রীর কাছে আসা টিকিট লবিংয়ের সব দেখভাল করছেন সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) রাশেদ প্রধান। তিনি টিকিট প্রত্যাশীদের তালিকা অপারেশন শাখায় মন্ত্রীর কাছে পাঠাচ্ছেন। এভাবে এক হাজারের বেশি টিকিট দেওয়া হয়েছে।
তবে রশিদ প্রধান বলেন, একজন এপিএসের পক্ষে এত টিকিট দেওয়া কি সম্ভব? তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি। অনেকেই টিকিট প্রত্যাশী। আমি চার জনের মৌখিক তদবির করেছি। অতিরিক্ত বগি বসানো হলে সেখানে টিকিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অপারেশন শাখা। আমি এখনো কোনো টিকিট পাইনি।
কোটা বন্ধ, লবিং চলছে: সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হকের আমলে ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকিট ১০ শতাংশ ভিআইপি ও রেলকর্মীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। সাধারণ কোটার নামে ১০ শতাংশ বেশি টিকিট বিতরণের জন্য রাখা হবে। রেল ভবন ও কমলাপুরে রেজিস্টারে নাম লিখে এসব টিকিট বিতরণ করা হয়। মন্ত্রী, এমপি, আমলাদের নামে আধা-সরকারি চিঠি (ডিও) দিয়ে তখন ট্রেনের টিকিট নিয়ে হরিলুট চলে।
নুরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর ভিআইপি কোটা বন্ধ হয়ে যায়। টিকিটের জন্য সংরক্ষিত দুই শতাংশ ছাড়া রেলকর্মীদের জন্য কোনো কোটা নেই। তবে সামরিক কোটার জন্য কোন কোটা নেই। তা ছাড়া আগের মতো মন্ত্রী-এমপিদের ডিও নেওয়া হচ্ছে না।
রেল ভবনের কর্মকর্তারা জানান, সব ধরনের কোটা তুলে নেওয়া হলেও টিকিট কাটা বন্ধ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়, পুলিশ, দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিচার বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী টিকিট দেওয়া হচ্ছে। তবে আগের মতো খাতায় লিখে নই- টিকিট দেওয়া হচ্ছে মৌখিকভাবে বা মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে।
রেলওয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, একটি ট্রেনে ৮০০ আসন থাকলেও কোটার দুই শতাংশ হিসেবে ১৬টি আসন সংরক্ষণ থাকার কথা। কিন্তু মাত্র ১৬ টি টিকিটে কি হয়? ঈদের সময় প্রতিটি ট্রেনের ১০০-১৫০ আসনের টিকিট বিক্রি হয়। ক্ষমতায় যারা আছে তারা মার্জিত, মার্জিত চেয়ারে ভ্রমণ করে না। তারা এসি বা কেবিনের টিকিট নেয়। যে কারণে সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়েও এসির টিকিট পান না সাধারণ মানুষ। বিক্রয় শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২৮ ও ২৯ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। অনলাইনে শূন্যপদের সংখ্যা শূন্য। কাউন্টারে টিকিটের সংখ্যা শূন্য দেখাচ্ছে। কিন্তু বুধবার কমলাপুর স্টেশনের সার্ভার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দু-একজনকে টিকিট নিয়ে বের হতে দেখা যায়। এর আগে, রেল ভবনে একজন বুকিং ক্লার্ককে বলতে শোনা গিয়েছিল, “আমার কথা ছাড়া ২৮ এবং ২৯ এপ্রিলের একটি টিকিট সেন বিক্রি না করে।
অতিরিক্ত বগি সংযোজন : রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, ঈদুল ফিতরের ট্রেনে চাহিদার তুলনায় আসন সংখ্যা নগণ্য। তবে অতিরিক্ত বগি যুক্ত করে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের আসন দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যোগ করা বগিগুলির মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি এবং কেবিনগুলিও রয়েছে৷