রিকশাচালক সেজে আসামি ধরল পুলিশ

0

এএসআই সাদ্দাম হোসেন লুঙ্গি পরে দুই দিন এলাকায় ফল বিক্রি করেন। এএসআই বেলায়েত হোসেন দুই দিন ধরে ভ্যানে করে সড়কে আলু, বেগুন ও শসা বিক্রি করছেন। লুঙ্গি পরে তারা আবাসিক এলাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়। রিকশার চালক ও যাত্রীর আসনেও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওই রিকশা পুরো এলাকা ঘুরে বেড়ায়। দৃশ্যটি সিনেমার মতো মনে হলেও চট্টগ্রামে অত্যন্ত ধূর্ত প্রতারক দম্পতিকে ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ। এর আগেও একাধিকবার পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে তারা পালিয়ে গেলেও এবার আর রক্ষা পায়নি।

মঙ্গলবার সিনেমার স্টাইলে রেকি করে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর প্রতারক স্বামীকে প্রথমে গ্রেপ্তার করার পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতারক স্ত্রীকেও হেফাজতে নেয় পুলিশ। সীতাকুণ্ড উপজেলার শীতলপুর এলাকা থেকে দুই আসামিকে আটক করা হয়েছে।

আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন জানান, মুহিব খান ও দিলশাদ বেগমের বিরুদ্ধে ১৫টি আর্থিক ও চেক জালিয়াতির মামলায় ওয়ারেন্ট রয়েছে। দুবার সে তাদের অবস্থান চিনতে পারলেও বারবার তার হাত পিছলে যায়। পরে আমরা কৌশল ও ছদ্মবেশ পরিবর্তন করতে বাধ্য হই।

তিনি আরও জানান, পুলিশের এসআই অর্ণব বড়ুয়ার নেতৃত্বে এএসআই সাদ্দাম ও বেলায়েত হোসেন বিভিন্ন ছদ্মবেশে এলাকায় টহল দেন। তাদের অবস্থান সনাক্ত করতে ১৫ থেকে ২০ দিন পর নজরদারি চালানো হয়েছিল। সীতাকুণ্ড থানার শীতলপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

এএসআই সাদ্দাম জানান, শীতলপুর এলাকায় দুদিন লুঙ্গি পরে কখনো ফল, কখনো শাকসবজি, কখনো রিকশায় করে যাত্রী নিয়ে আবাসিক এলাকার এক গলি থেকে আরেক গলিতে নিয়ে যেতাম। আসামি খুব চালাক হওয়ায় তাকে হেফাজতে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তিন-চারজনকে একসঙ্গে দেখলে এক মুহূর্তও ওই এলাকায় থাকতেন না। ছদ্মবেশে যদি না ধরতাম তাদের ধরা খুবই কঠিন হতো।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পোর্ট সিটি বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহিব খানের বিরুদ্ধে মোট সাতটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তিনি আকবরশাহ থানার পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনীর রেজিস্ট্রার অফিস এলাকার বাসিন্দা। সাতটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মুহিব খানের স্ত্রী দিলশাদ বেগমের বিরুদ্ধে মোট আটটি ওয়ারেন্ট রয়েছে।

দুটি মামলায় মুহিব খানকে এক বছর ১০ মাসের কারাদণ্ড ও ২৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দিলশাদ বেগমকে ২৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মামলায় এক বছর ১০ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ডেভেলপার ব্যবসার নামে ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ না করায় তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তাদের ১০টি চেক জালিয়াতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং দুটি জালিয়াতির মামলায় ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। চেক জালিয়াতির তিনটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *