শ্রীলঙ্কা নিজেকে ঋণ খেলাপি হিসেবে ঘোষণা করেছে
আর্থিক সংকটের মধ্যে থাকা শ্রীলঙ্কা বলেছে যে তারা তাদের ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। এতে শ্রীলঙ্কা নিজেদের ঋণখেলাপি হিসেবে ঘোষণা করে।
শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে যে বিদেশী সরকার এবং সংস্থাগুলি যেগুলি বিভিন্ন সময়ে শ্রীলঙ্কাকে অর্থ ধার দিয়েছে তারা ইচ্ছা করলে আজ থেকে এই ঋণ পুঁজি করতে পারে। অর্থাৎ, তারা মূলধনের কারণে সুদের পরিমাণ যোগ করতে পারে বা শ্রীলঙ্কার টাকায় ঋণ পরিশোধ করতে বেছে নিতে পারে।
জরুরি ভিত্তিতে পণ্য আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ফুরিয়ে যাওয়ায় সরকার এ উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছে। শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগটিকে “শেষ অবলম্বন” হিসাবে বর্ণনা করেছে। যাতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার আর অবনতি না হয়।
এদিকে দেশটির অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি বলেছেন, শ্রীলঙ্কার জরুরি ভিত্তিতে তিন বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ প্রয়োজন। শনিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তেল, বিদ্যুৎ ও ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অর্থের প্রয়োজন হবে। আমি এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বসব। আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংকের কাছেও সহায়তা চাইবে। চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সাহায্যও চাওয়া হবে। শ্রীলঙ্কা জ্বালানির জন্য ভারতের কাছে ৫০০মিলিয়ন ঋণও চাইবে। যা প্রায় পাঁচ সপ্তাহ চলা যাবে।
শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড পুনর্গঠন করতে চায়, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশটি জুলাই মাসে এক বিলিয়ন বন্ডের পরিশোধের উপর স্থগিতাদেশ চাইবে। সরকার এ জন্য বন্ডহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়।
এমন পরিস্থিতিতে, বিরোধী এনপিপি সাংসদ অনুরা কুমারা দিশানায়েকে বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা ছাড়া প্রেসিডেন্টে গোতাবায়ার জন্য একমাত্র উপায় রয়েছে। অর্থাৎ পদত্যাগ করা। এ ছাড়া অন্য কোনো প্রস্তাব আমরা মানতে রাজি নই। দেশের মানুষও এখন প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চায়। তারা অস্থির হয়ে উঠেছে।
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতার পর থেকে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলমান সংকট মোকাবিলায় সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাভায়া রাজাপাকসে। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ছাড়া মন্ত্রিসভার ২৬ সদস্যের সবাই ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও পদত্যাগ করেছেন। এদিকে ক্রমাগত দরপতনের কারণে দেশের শেয়ারবাজারও বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গোটাবায়া রাজাপাকসে সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।