হামলায় কোণঠাসা, প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ মামলায় ক্ষুব্ধ মেয়র পক্ষ ,বাস টার্মিনাল নিয়ে দ্বন্দ্ব

0

বরিশাল নগরীর পশ্চিমাঞ্চলের রূপাতলী বাস টার্মিনাল দখলকে কেন্দ্র করে সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। আরো জটিল. টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণে জেলা বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও শ্রমিক ইউনিয়নের অধীনে দুটি পৃথক কমিটি প্রায় এক মাস ধরে মরিয়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রাজনৈতিক-সচেতন এলাকাবাসী জানান, রূপাতলী বাস টার্মিনালের কর্তৃত্ব নিয়ে মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও লাঞ্ছনার ঘটনা শহরে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। একাধিক হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে প্রতিমন্ত্রীর দল। অন্যদিকে দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারে ক্ষুব্ধ মেয়র অনুসারীরা।

গত ১৫ মার্চ রূপাতলী টার্মিনাল দখল নিয়ে মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীর দুই শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। ওই দিন প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সুমন মোল্লা। টার্মিনাল সংলগ্ন সুলতান মোল্লার অফিসে অবস্থান। টার্মিনাল ভবনের নিচতলায় মেয়র-অধিভুক্ত শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শাহরিয়ার বাবু তাদের সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান নেন। ওই দিন থেকেই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রূপাতলী বাস টার্মিনাল।

দুই পক্ষের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে গত রোববার মেয়রের অনুসারী শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রতিমন্ত্রী সুলতান মাহমুদের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। হামলায় সুলতান মাহমুদসহ ২০ জন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলার জন্য মেয়রের অনুগত ছাত্রলীগ নেতাদের দায়ী করেছেন সুলতান মাহমুদ।

সুলতান মাহমুদের কার্যালয়ে হামলার একদিন পর ইফতারের ঠিক আগে প্রতিমন্ত্রী-সহযোগী শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুমন মোল্লা ও তার সহযোগী আল-আমিনের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। সুমন মোল্লা ও আল-আমিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সুমন মোল্লার মা সেতারা বেগম ও স্ত্রী আইরিন আক্তার হামলার জন্য মেয়রের অনুসারীদের দায়ী করেছেন।

সোমবার রাতে কোতয়ালী মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় সেতারা বেগম অভিযোগ করেন, রূপাতলী বাস টার্মিনাল দখল নিয়ে বিরোধের জেরে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা সুমন মোল্লাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে সুমন মোল্লার বাড়িসহ আরও তিনটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

কোতয়ালী মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, সুমন মোল্লার মা সেতারা বেগমের দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন- যুবলীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইদুর রহমান জাকির। ২৫, তার ভাই জাহিদুর রহমান মনির মোল্লা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শহিদুল ইসলাম রনি, সোহেল মোল্লাসহ আওয়ামী লীগের ২৫-৩০ নেতাকর্মী। এদের মধ্যে সিদ্দিকুর রহমান মাসুমকে মঙ্গলবার সকালে আটক করে পুলিশ।

দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, রূপাতলী বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা বড় ষড়যন্ত্র।

বুধবার মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বাবু বলেন, ভুঁইফোঁড়ের লোকজন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

মামলার আসামি যুবলীগ নেতা সাইদুর রহমান জাকির ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেয়রের অনুসারী বলেন, সুমন মোল্লা আগে বিএনপির কর্মী ছিলেন। সে একজন মাদক ব্যবসায়ী। মাদক ব্যবসার জের ধরে তার ওপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আমারসহ দলের অন্যান্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গতকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনুশ্রী শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, মেয়রের অনুসারীদের নিপীড়নে আমরা রূপাতলী টার্মিনাল ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। পুলিশ ছাত্রের ছায়ায় তার অফিস ও সুমন মোল্লার ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় আমরা এখন কোণঠাসা। মামলা হলেও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুলতান মাহমুদ বলেন, আজ নয়, আমরা আবার টার্মিনালে যাব। কিছু হলে দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।

যুবলীগ নেতা ও প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, প্রশাসন কঠোর না হলে আগামী দিনে সহিংসতা আরও বাড়বে। দেয়ালে পিঠ দিলে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হব। মাহমুদুল হক খান মামুন, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্ববায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *