গরিবের ভাতার টাকার ওপর কর্মকর্তার চোখ।গাইবান্ধা

0

ওরা ২৩ জন। এদের মধ্যে দুজন সমাজসেবা বিভাগের কর্মকর্তা। গাইবান্ধা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন শাহ তার ছায়া সঙ্গী একই বিভাগের উপজেলা সমাজসেবক ফরহাদ আলম। একটি মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির দুই কর্মচারী। বাকি১৯ জন প্রতারণার সরাসরি সহযোগী ছিল। গাইবান্ধার খোলাহাটি ইউনিয়নের বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের চোখ পড়েছে ভাতার টাকার দিকে। তারা গরীবের টাকা উধাও করে দেয়।

গত জুলাই মাসে গাইবান্ধার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জানতে পারেন যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এর এজেন্ট এবং সমাজসেবা বিভাগের কিছু অসাধু ব্যক্তি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করছে। অনেকের স্বজনরা তাদের দুর্দশার কথা ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেছেন। এরপর ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বার্তা দেন। এরপর পিবিআই তদন্ত শুরু করে। সাত মাস তদন্ত শেষে ৭১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে পিবিআই।

ওই প্রতিবেদনে খোলাহাটি ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়স্ক ভাতার চিত্র উঠে আসে। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মাসের পর মাস ভাতার টাকা দিয়ে পকেট ভর্তি করছেন। খোলাহাটিতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ২৬ জন। এদের মধ্যে ৬ জন প্রতিবন্ধী, ১ হাজার ৩৬ জন বিধবা এবং ২ হাজার ২০২ জন বয়স্ক। পিবিআই প্রমাণ পেয়েছে যে ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ইউনিয়নের ১১৬ জন সুবিধাভোগীর অর্থ অপব্যবহার করা হয়েছে। অক্টোবর থেকে ওই ইউনিয়নে সুবিধাভোগীদের অনলাইন অর্থ প্রদান শুরু হয়। মূলত দুই ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে গরীবের টাকা মেরে ফেলা হয়েছে। যে মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে টাকা পাঠানোর কথা ছিল, তা হঠাৎ করে বদলানো হয়েছে সমাজসেবা অফিস থেকে। ভাতার টাকা পাঠাতে হলে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে ‘পে-রোল’ নাম লিখতে হবে। ‘পে-রোল’ প্রণয়নের সময় যাদের ভাতা পাওয়ার কথা তাদের নাম এবং অন্যদের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর প্রবেশ করানো হয়। অন্যদিকে, অবহেলার কারণে কিছু ‘পে-রোল’ উপজেলা থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়নি।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাসির ৯৬ জন সুবিধাভোগীর মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ‘পে-রোল’-এ অন্য নম্বর বসিয়ে ৪ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি দণ্ডবিধির ৪০৩/৪২৭/১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, প্রতিবন্ধীদের প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা এবং বিধবা ও বয়স্কদের প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সুবিধাভোগীর টাকা টানা তিন মাস মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানোর কথা ছিল।

যাদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে টাকা সরানো হয়েছে তারা হলেন- ময়নাল মিয়া, আশরাফুল আলম, রেজওয়ান ইসলাম, আজিমা খাতুন, আবুল কালাম আজাদ, আরমান হোসেন, আবদুল ওয়াহাব, আরিফুল মিয়া, আবদুল রহিম, মনোজ কুমার সরকার, যতীন্দ্র কুমার রায়, আতাউর মোল্লা। . , জামাল উদ্দিন, রেজাউল করিম, মাহবুবুর রহমান, মিজানুর রহমান, সুমন্ত কুমার বর্মন, নাহিদ হাসান ও মোঃ শাহজাহান।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, “সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কেউ ফাঁদে ও প্রতারণার শিকার হবেন এটা মেনে নেওয়া কঠিন। সুবিধাভোগীর আবেদন ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন নম্বর পরিবর্তন করা যাবে না যাতে কেউ টাকা তুলতে না পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *