কার্ড একজনের নামে, চাল নেন আরেকজন

0

দুই বছর আগে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ইউপির এক সদস্য বনগাঁ গ্রামের স্থানীয় কল্পনা আক্তারের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি কপি নিয়েছিলেন এই বলে যে তিনি তাকে একটি ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিডি) কার্ড দেবেন। কয়েক দফা যোগাযোগের পর কল্পনাকে জানানো হয় কার্ড করা সম্ভব নয়। পরে ওই নারী ঢাকায় ছেলেদের কাছে যান। গত নির্বাচনে ওই ইউপির একটি ওয়ার্ডে কল্পনার ভাগ্নে সদস্য নির্বাচিত হন। গত শনিবার নবনির্বাচিত পরিষদ সদস্যদের অধীনে ভিজিডি সুবিধাভোগীদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়। এ সময় কল্পনার ভাগ্নে তার নামে একটি কার্ড দেখলেও বনগাঁ গ্রামের লিটন তালুকদারের স্ত্রী রাজিয়া বেগম ধান তুলছিলেন।

বিষয়টি জানার পর গত সোমবার ইউনিয়ন পরিষদে যান কল্পনা।  সেখানে জানতে পারেন যে রাজিয়া গত ১৩ মাস ধরে চাল তুলতে তার কার্ড ব্যবহার করছেন। শনিবারও তার কার্ড ব্যবহার করে চাল নেওয়া হয়।

৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সাজলু মিয়াও জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। “আমি কল্পনাকে কার্ড করার চেষ্টা করেছি,” তিনি বলেছিলেন। কিন্তু কার্ড বানাতে পারিনি। কয়েকদিন পর কল্পনার নামে একটি কার্ড দেখলাম, কিন্তু লিটনকে চাল দেওয়া হচ্ছে। কল্পনার স্বামী ও লিটন মিয়ার মধ্যে সমঝোতা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কল্পনার স্বামী নুর মিয়া এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। আর রাজিয়ার স্বামী লিটন তালুকদার দাবি করেন, তার কাছে কারও কার্ড নেই।

শুধু কল্পনা নয়, ওই ইউপিতে আরও কয়েকজনের নাম কার্ড করে চাল নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনলাইনের তালিকায় জানা গেছে, নোয়াগাঁও গ্রামের শিপ্রা রানী দত্ত ১নং ওয়ার্ডে। তবে তাদের নামে কার্ডের তথ্য তাদের কারোরই জানা নেই। গত ১৩ মাস ধরে অনিতার পরিবর্তে শিপ্রার কার্ড থেকে তুলে নিচ্ছে বনগাঁ গ্রামের রাজিয়া বেগম, তেলিপাড়া গ্রামের ডলি আক্তার ও লক্ষ্মী রানীর আমেনা আক্তার। এসব কার্ডের বিপরীতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে ১৩ মাসে ১ হাজার ৫৮০ কেজি চাল উত্তোলন করা হয়েছে।

সুবিধাভোগীদের কার্ড থাকার কথা থাকলেও সেগুলো মধ্যনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় তালুকদারের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র চাল বিতরণের সময় সুবিধাভোগীদের কার্ড দেওয়া হয়েছে। কার্ডটি প্রকৃতির সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছায়নি। একজনের জন্য অন্যের কার্ড ব্যবহার করার সুযোগও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ইউপি সচিব রুহুল আমিন দাবি করেন, কার্ডগুলো সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীর বিজয় ও ইউপি সদস্য আরশাদ মিয়ার হেফাজতে রাখা হয়েছে। তিনি চাল বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেননি। আমি গত ১৩ মাসে একটি কার্ডেও স্বাক্ষর করিনি।

প্রবীর বিজয় কার্ড নিজের কাছে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, কার্ডগুলো হাতে দিলে তার অনেক সময় নষ্ট হতো। তবে কার্ডগুলো আমার বা সচিবের কাছে জমা হতো, আরশাদ মেম্বারের কাছে নয়। চাল দেওয়ার পর কার্ডগুলো অফিসে রেখে সই করে দিতাম।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান বলেন, প্রকৃত কার্ডধারীরা তাদের কার্ড সম্পর্কে না জেনে ভিজিডির চাল না পেলে এটা অন্যায়। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *