গ্রামের বাড়িতে হাদিসুরের লাশ, কান্নায় ভেঙে পড়ে স্বজনরা

0

দীর্ঘ সংগ্রামের পর অবশেষে হাদিসুরের লাশ বরগুনার বেতাগীতে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় হাদিসুরের পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোমবার রাত ৯টা ৪৩ মিনিটে লাশ গ্রহণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুহৃদ সালেহীন। বেতাগী থানার উপ-পরিদর্শক মো. আল-আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ইয়াসমিন, ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়-স্বজন ও লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুহৃদ সালেহীন।

এর আগে দুপুর ১২টার পর হাদিসুরের মরদেহ নিয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। হাদিসুর রহমানের মরদেহ গ্রহণ করেন তার ছোট ভাই গোলাম মওলা প্রিন্স। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন।

 ভাইয়ের কফিন স্পর্শ করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার আহ্বানে বিমানবন্দরের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পরিবারের সদস্যরা বরগুনার বেতাগীর হাসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের উদ্দেশে রওনা হন।

লাশ গ্রহণের পর শওকত হাসানুর রহমান রিমন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমে আমরা হাদিসুরের মরদেহ তার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক আমির মো. আবু সুফিয়ান বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী হাদিসুরের পরিবার বীমাসহ সব ধরনের সুবিধা পাবে।

হাদিসুরের স্বজনরা জানিয়েছেন, পারিবারিক কবরস্থানে করব দেওয়া হবে। বিদেশের মাটিতে বীরের মতো প্রাণ হারানো হাদিসুরকে দেখতে আসা মানুষ যাতে কোনো ঝামেলা ছাড়াই শেষবারের মতো দেখতে পারেন সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার বাড়ির উঠোনে তাঁবু স্থাপন, দর্শনার্থীদের জন্য চেয়ার প্রস্তুত করা হয়েছে।

চাচা মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে হাদিসুরকে দাফন করা হবে। তাদের প্রিয় নাতিকে দাদা আতাহার উদ্দিন হাওলাদার ও দাদী রোকেয়া বেগমের কবরের পাশে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি ইউক্রেনের আলভিয়া বন্দরে আটকে যাওয়ার সময় ২ মার্চ রকেটের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়। এতে জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান নিহত হন।

ওই জাহাজে থাকা হাদিসুরের সহকর্মীরা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে গত বুধবার ঢাকায় আসেন। তারা জাহাজ থেকে নেমে মরদেহটিকে নিরাপদ বাঙ্কারে রেখে আসে। তবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাকে সঙ্গে আনতে পারেননি। হাদিসুরের মরদেহ বাঙ্কারের ফ্রিজারে রাখা হয়।

শুক্রবার সকালে ইউক্রেন থেকে রওনা হয়ে রাতেই হাদিসুরের প্রতিবেশী রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে পৌঁছায়। সেখান থেকে শনিবার রাতে তুর্কি এয়ারওয়েজের একটি কার্গো ফ্লাইটে মরদেহগুলো দেশে পাঠানো হয়। রোববার মরদেহ বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় রোববার হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *