ভয়ে থাকেন ৫০ হাজার শিক্ষার্থী।চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ

0

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে বেশ কিছু স্কুল ও কলেজ রয়েছে। এখানে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ রয়েছে। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী দুটি প্রতিষ্ঠানই এখন শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় দিনই ধরেই ছাত্রলীগে মারামারি চলছে। গুলির মতো ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন। একের পর এক সংঘর্ষে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত, শিক্ষকরা উদ্বিগ্ন, উদ্বিগ্ন হতে হচ্ছে অভিভাবকদের। অন্যদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।

গত ৫ মার্চ হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির বৈঠক চলাকালে ছাত্রলীগের অপর একাংশের নেতাকর্মীরা অধ্যক্ষের কার্যালয় ভাংচুর করে। এর আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ দিকে ফিরে তাকালে প্রায় প্রতি মাসেই কিছু না কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা দেখতে পাবেন।

হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের (ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা) নিয়ে সব সময় টেনশনে থাকি। আমি তাদের বোঝানর চেষ্টা করি; কিন্তু আমি পারি না। এ পর্যায়ে আমরা রাজনীতিবিদসহ সবার সহযোগিতা চাই।

তিনি বলেন, “শুধু মহসিন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, আশপাশের কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। সংঘর্ষের আশঙ্কাও রয়েছে তাদের। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত। এটা কারো জন্য কাম্য হতে পারে না। ‘

চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ একই স্থানে অবস্থিত। চকবাজার সড়কের দুই পাশে দুটি কলেজের অবস্থান। দুটি কলেজে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৬ হাজারের বেশি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজে প্রায় ১৯ হাজার এবং মহসিন কলেজে ১৭ হাজারের বেশি। এই দুটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক (সম্মান ও পাস) এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এর বাইরে কোচিং সেন্টারের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। সব মিলিয়ে আতঙ্কে রয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার শিক্ষার্থী।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংঘর্ষে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। অন্য অংশ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। মূলত নগর আওয়ামী লীগ ও নগর ছাত্রলীগের মধ্যে বিভক্তির কারণে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত।

এক সময় চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে ছাত্রশিবিরের আধিপত্য ছিল। ছাত্রলীগের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের পর ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয় শিবিরকে। এতে অনেকেই স্বস্তি পেলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে স্বস্তি হারিয়ে যায়।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস জাহান বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য পুলিশকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।

চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে নাসির-নওফেলের অনুসারীরা আবারও একাধিক উপদলে বিভক্ত। তদারকি করেন নগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। তারা শক্তি প্রদর্শনে একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

ছাত্রলীগ নেতা মো. নাঈমকে আহ্বায়ক করে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে। তিনি নওফেলের অনুসারী। অন্যদিকে আ জ ম নাছির সমর্থিত একটি কমিটি রয়েছে। বোরহান উদ্দিন ইমনকে সভাপতি ও রবিউল ওয়াহাব কামালকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের মহানগর ছাত্রলীগের অনুমোদিত কমিটি রয়েছে। এ কমিটির সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ মল্লিক সবুজ। তারা নওফেলের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তবে পাল্টা কমিটি ঘোষণা না করলেও এ কলেজে আ জ ম নাছিরের গ্রুপের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এ অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাবিবুল্লাহসহ একাধিক ছাত্রলীগ নেতা

হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজে পছন্দের প্রার্থীদের দায়িত্ব দিয়ে মহানগর ছাত্রলীগ কমিটি দিয়েছে। তা মেনে নিতে পারেননি বিদ্রোহী নেতা-কর্মীরা। তাই আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে রাজনীতি করছি। এটা ঠেকানো গেলে আমরা বসে থাকতে পারব না। ‘

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ অবশ্য বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আগের মতো দ্বন্দ্ব নেই। এরপরও অনেক ছোটখাটো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

নাসিরের অনুসারীদের নিয়ে গঠিত মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ফলে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে আমরা পাল্টা কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *