হারিছ চৌধুরীর মরদেহ কবর থেকে তোলা হবে

0

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ডিএনএ টেস্ট করতে যাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে লাশ কবর থেকে তোলা হবে। কিন্তু তারপর হারিছে নিজের ভাই ও সন্তানের চুল বা শরীর থেকে কোনো চিহ্ন নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করা হবে। সংস্থাটি বলেছে যে এটি সমস্ত সন্দেহ এবং রহস্য উন্মোচন করতে পারে। গতকাল সিআইডির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। তবে তদন্তে প্রমাণের আগে ইন্টারপোলে হারিছের নামে জারি করা রেড ওয়ারেন্ট ঝুলছে তা সড়ছে না।

পুলিশ সদর দপ্তরে জাতীয় কেন্দ্রীয় ব্যুরো (এনসিবি) বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে ইন্টারপোলের সাথে কার্যক্রম সমন্বয় করে। এনসিবির সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হারিছ চৌধুরীর নামে রেড নোটিশ জারি করা হয়। আমরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে সিআইডিকে চিঠি দিয়েছি। হারিছের মৃত্যুর বিষয়ে সিআইডির প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট নয়। তাই আমরা দ্বিতীয় দফায় সিআইডিকে চিঠি দিয়ে প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব চেয়েছি। মৃত্যু সম্পর্কে ১০০% নিশ্চিত না হলে রেড নোটিশ তোলা যাবে না।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন জানান, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে আদালতের অনুমতি নিয়ে লাশ তোলা করা হবে। ডিএনএ পরীক্ষায় উন্মোচিত হবে সব রহস্য।

সম্প্রতি হারিছ চৌধুরী মাহমুদুর রহমানের ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। সেই পরিচয়ে তিনি একটি জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করেছিলেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ পাওয়া হারিছ প্রায় ১১ বছর ধরে ঢাকায় ছিলেন গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে। ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আরও দাবি করা হয়, মাহমুদুর রহমান নামে পরিচিত হারিছকে ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদের কমলাপুর এলাকার জামিয়া খাতামুন্নাবীন মাদ্রাসায় দাফন করা হয়। গণমাধ্যমে এমন তথ্য প্রকাশের পর মাহমুদুর রহমান হারিছ চৌধুরী কিনা তা গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে পরিচয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন তদন্ত শুরু হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের পরিচয়ে দাফন করা লাশ শিগগিরই কমলাপুর এলাকার কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়া হারিছ চৌধুরী কীভাবে অন্য ব্যক্তির তথ্য ব্যবহার করে পরিচয় গোপন করে এনআইডি তৈরি করেছেন তা তদন্ত শুরু হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে হারিছের মৃত্যুর খবর বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। কোথাও বলা হয়েছে হারিছ ঢাকায় করোনায় মারা গেছেন। কোথাও বলা হয়, হারিছ লন্ডনে মারা যান।

গতকাল বিকেলে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করে আরও দেখা গেছে যে হ্যারিসের জন্ম ১ নভেম্বর, ১৯৫২ সালে। জন্ম সিলেটের কানাইঘাটের দর্পণ নগরে। সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এনসিবির প্রথম চিঠির জবাব দেওয়ার সময় তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না। এখন নিশ্চিত হতে তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তারপর এনসিবিকে জানান।

২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত করেছে সিআইডি। ওই সংস্থার আবেদনের পর হারিছ চৌধুরীসহ কয়েকজন পলাতক আসামির বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়। ভেরিফিকেশন ও সিলেকশনের পর কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটে ফটো সহ একটি রেড নোটিশ দেয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, মাহমুদুর রহমান নামে হারিছ চৌধুরী পাসপোর্ট ও এনআইডি তৈরি করে বছরের পর বছর ঢাকায় আত্মগোপন করে আছেন এমন খবর বিস্ময়কর। পাসপোর্ট তথ্য এসবি দ্বারা তদন্ত করা হয়.

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন। এতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বহু নেতাকর্মী আহত হন। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর আদালত ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে হারিছ চৌধুরীসহ ১৭৮জন ঘটনার পর বিভিন্ন সময়ে আত্মগোপন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *