সাবেক মন্ত্রীর এপিএসের সম্পদের পরিমাণ কোটি কোটি টাকা।ফরিদপুরের ফুয়াদ

0

ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে পড়ার সময় মেস থেকে টিউশন ফি দিতেন বলে তিনি ‘ফুয়াদ মাস্টার’ নামে পরিচিত ছিলেন। ২০১৫ সালে তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এপিএস হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর হাতে ‘আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান। দুর্নীতির ফাঁকে রাতারাতি হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় দেখে হতবাক পুলিশ বিভাগ।

নগরকান্দার বিলনালিয়ার মোজাহারুল হকের ছেলে এএইচএম ফুয়াদ হোসেনের সম্পদের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশের একটি দল। আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে ঢাকার অভিজাত এলাকায় তার অন্তত ২০টি ফ্ল্যাট, উত্তরায় একাধিক প্লট এবং বিভিন্ন ব্যাংকে ৩০ কোটি টাকা ছিল। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা, সিলেট ও ​​ফরিদপুরে রাবার বাগানসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত বিঘা জমি কিনেছেন। তার কিছু আত্মীয় ধনী হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ফরিদপুরের দুই বিশিষ্ট ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে, যারা মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ফুয়াদের সম্পদের খোঁজে এই তদন্তের সূত্র ধরে ড. ফুয়াদ ও মন্ত্রীর ভাই সদ্য গ্রেফতার হওয়া খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর যৌথ উদ্যোগে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

এর আগে ফুয়াদের বিরুদ্ধে সিআইডির অভিযোগে রুবেল ও বরকত নামে দুই ভাইকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করার অভিযোগও ছিল। ওই মামলায় তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

তদন্তকারীরা জানেন যে প্রাক্তন এপিএস জমি কেনার ব্যাপারে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের তালিকা বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। নগরকান্দার বিলনালিয়ায় ফুয়াদের প্রায় একশ বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়া ফরিদপুর বাইপাস সড়কে আরও ১০ বিঘা জমি রয়েছে। বিলনলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে রাস্তা সংলগ্ন ১৪ বিঘা জমি কিনেছেন। মামুন চোকদার থেকে কিনেছে। তবে জমির মালিকানা দেখিয়েছেন দুই হিন্দু ব্যবসায়ী। নগরকান্দার পুরাপাড়া ইউনিয়নে ফুয়াদেরের ২০ বিঘা বেনামী জমি রয়েছে। উত্তরে ফুয়াদের আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীদের নামে প্রায় ৫০ একর জমি রয়েছে।

ঢাকার প্রায় সব অভিজাত এলাকায় ফুয়াদের ফ্ল্যাট রয়েছে। গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ধানমন্ডিতে ৫টি ফ্ল্যাট, বনানীতে ৩টি, মোহাম্মদপুরে ২টি এবং বসুন্ধরায় ২টি ফ্ল্যাট। বসুন্ধরায় ৪টি, উত্তরায় ২টি, ফরিদপুরের চরকমলাপুর মৈত্রী টাওয়ারে ১টি এবং একই এলাকায় ন্যাশনাল হাউজিংয়ে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া ঢাকায় রয়েছে নানা ধরনের বেনামী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে তার দুটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সিলেটে রাবার বাগানও রয়েছে। বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে ফুয়াদের প্রায় ২৫ কোটি টাকা রয়েছে। খুলনায় ফুয়াদের দুটি চিংড়ির খামার রয়েছে।

ফুয়াদের ভাতিজি যুবলীগ নেতা মামুনের ফরিদপুর নিউ মার্কেটে ২৫টি ও হেলিপোর্ট মার্কেটে ৮টি দোকান রয়েছে। সে তার মামার হাতে এই ধন গুলি করে। এ ছাড়া ফরিদপুর শহরে ৩টি রড-সিমেন্টের দোকান ও ৪টি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যার মালিকানা ফুয়াদের আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীদের নামে দেখানো হয়েছে যাদের পর্যাপ্ত আয় নেই।

ফুয়াদের বড় ভাই বিএনপি নেতা রাফেদ চোকদারের ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ বিঘা জমি ও ২৫টি দোকান রয়েছে। সাবেক যুবদল নেতা (বর্তমানে যুবলীগ নেতা) ফুয়াদের ভাগ্নে জুয়েলের সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ফুয়াদের ভাগ্নে মাহাসিনের। প্রকৃতপক্ষে, ফুয়াদ সেই সম্পদের মূল বিনিয়োগকারী। এছাড়াও ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ফুয়াদের বোন, ভাগ্নি, ভাগ্নে এবং অনেক আত্মীয়-স্বজনসহ আরো ৩০টি ফ্ল্যাট, দোকান, বাস-ট্রাকের টায়ারের দোকান, ৫টি বিলাসবহুল বাস, ৬০টি হাইড্রোলিক ট্রাকসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ফুয়াদের উত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদ বলেন, মন্ত্রীর এপিএস থাকাকালে টাকা আসত। সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দরপত্রে মন্ত্রীর ভাই বাবর ও ফুয়াদের নিয়ন্ত্রণ ছিল। আমি আরও শুনেছি যে এলজিইডিতে পছন্দের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদোন্নতির উপর এর প্রভাব রয়েছে। সেখান থেকে অনেক টাকা কামিয়েছেন। এ সময় তিনি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের পিও ছিলেন। এরপর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *