কর্মবিরতিতে অচল মাঠ প্রশাসন
নাম পরিবর্তন ও বেতন গ্রেডে পদোন্নতির দাবিতে ধর্মঘট করছেন বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মচারীরা। এ জন্য নামজারি, জলমহাল, চলমান দরপত্র কার্যক্রম, ইজারা মূল্য আদায়, অর্পিত সম্পত্তির ইজারা আদায়, ভুল মামলা ও গণশুনানি সম্ভব হয়নি। ফলে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ চিঠি গ্রহণ ও পাঠানোসহ দৈনন্দিন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেননি কর্মচারীরা। এতে মাঠ প্রশাসনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসি, ইউএনও ও এসিল্যান্ড।
গতকাল কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কুড়িগ্রামের ডিসিকে চিঠি দিয়ে উজ্জ্বল হোসেন জানান, কর্মীরা দৈনন্দিন কোনো কাজ করেন না। চলমান কর্মসূচি দীর্ঘায়িত হলে এ কার্যালয়ের ভূমি সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। হবিগঞ্জের ডিসি ইশরাত জাহান মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলেন, সরকারি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজসহ জনসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। নওগাঁ জেলার ডিসি খালিদ মেহেদী হাসান প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছেন। ঝালকাঠির ডিসি মো. জোহর আলী মাঠ প্রশাসনের কর্মীদের দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান। অফিসের দৈনন্দিন সরকারি কার্যক্রমসহ জনসেবা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। একইভাবে প্রায় প্রতিটি জেলার ডিসিরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। আর ইউএনও, এসল্যান্ড ডিসিকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন। গত দুই বছরে অন্তত ৫০টি জেলার ডিসি, সব বিভাগীয় কমিশনার তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম একাধিক জেলার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কর্মচারীদের আন্দোলন স্থগিত করার প্রস্তাব দেন। ডিসিরা তাদের বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের দাবি দ্রুত সমাধান করবেন। এ জন্য তিনি আন্দোলন স্থগিত করতে বলেন। তবে তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি কর্মীরা। অবশেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মচারী সমিতি (বেবিসিসিএস) ও বাংলাদেশ কালেক্টরেট অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাস) নেতাদের তলব করেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মচারীদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল রাতে বলেন, আমি জনপ্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। বাড়ি থেকে কথা বলব না। অফিসে গিয়ে জেনেশুনে কথা বলবো। ‘
ঢাকা জেলার ডিসি মো. শহিদুল ইসলাম কর্মচারীদের পদমর্যাদা ও বেতন গ্রেড পরিবর্তনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ করেছেন। চিঠির অনুলিপি তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে হস্তান্তর করেন।
বাকাসাসের অতিরিক্ত মহাসচিব শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, জনগণের ভোগান্তি তারা চান না। এরপরও তারা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাদের এই পথ বেছে নিতে হয়েছে। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া ২৪ মার্চ পর্যন্ত তারা আন্দোলনে থাকবেন। এ নিয়ে চিন্তিত দেশের হাজার হাজার সেবা গ্রহীতা।