বশেমুরবিপ্রবিতে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ।চার দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা

0

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ছাত্রী গণধর্ষণের প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। চার দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ধর্ষকদের বিচারের আওতায় আনা, ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার  করা, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বসবাসের স্থানে নিরাপত্তা জোরদার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার চলে যাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। তাই গোপালগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসনের ওপর আস্থা উঠে গেছে। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং দ্রুত বিচার প্রত্যাশা করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে হামলায় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে চোখ বেঁধে প্রতিবাদ জানায় বিক্ষোভকারীরা। বিকেল ৫টায় নারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ভিসির পর প্রফেসর এ কিউ এম মাহবুব ও প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের চিহ্নিত করে মোমবাতি জ্বালিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

ধর্ষক ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল বেলা ১১টায় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মিছিল করেছে ৫ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, বশেমুরবিপ্রবিতে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তা কখনোই কাম্য নয়। এ ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে যদি মার খেতে হয়, তা আরও জঘন্য। এসব ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে।

চলমান আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. একিউএম মাহবুব বলেন, গত কয়েকদিনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি। ধর্ষকরা যাতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন কাজ করার সাহস না পায় সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। ছাত্রদের লাঞ্ছনার জন্য বিচার করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি শিক্ষার্থীদের সংযম ও সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানান।

নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থী : ক্যাম্পাসের বাইরের বিভিন্ন মেসে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে জানা গেছে। গণধর্ষণের পর গোবরাসহ কয়েকটি এলাকার বিভিন্ন মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা এই মুহূর্তে বন্দি জীবনযাপন করছে। এছাড়া অর্ধশতাধিক ছাত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এমনকি বখাটেসহ স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখে অশালীন আচরণ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, গত দুই দিন ধরে আমরা বারান্দায়ও যেতে পারছি না। স্থানীয় বখাটেরা সব সময় বাড়ির আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং অশালীন আচরণ করছে। এমনকি স্থানীয় নারীরাও আমাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করছেন।

প্রক্টর ডাঃ মোঃ রাজিউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *