অনিয়মের সব পথে হেঁটেছেন রফিকুল
অল্প বয়সেই তার লেখাপড়ায় অনিয়ম! সে জানে না কিভাবে নয়ছয় করতে হয়। অনিয়ম-দুর্নীতির সব গলিতে হেঁটেছেন তিনি। রফিকুল ইসলাম ফরিদপুর মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ে সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক তার বিরুদ্ধে সালথা উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার বাড়ি জমি দখল ও কারচুপিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
রফিকুল ইসলাম গত ১০ জানুয়ারি সালথা উপজেলা থেকে মধুখালী ইউএনও অফিসে যোগ দেন। এর আগে তিনি ২০১৭ সালের ২৯ মে সালথা ইউএনও অফিসে যোগ দেন এবং দীর্ঘ চার বছর আট মাস সেখানে চাকরি করেন। এ সময় তিনি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সালথার ইউএনও মোছা. তসলিমা আক্তার তাকে বদলির সুপারিশ করেন। এতদিন কেউ মুখ না খুললেও বদলির পর রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে।
কখনো সরকারি খাস জমি, কখনো অসহায় মানুষ আবার কখনো ভয় দেখিয়ে অন্যের জমি নিজের নামে লিখে নেওয়া রফিকুল ইসলামের নেশা। এভাবে তিনি প্রচুর অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি ইউএনও অফিসে চাকরি করে ক্ষমতা দেখিয়ে এমন অনিয়ম করেছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
জানা গেছে, ফরিদপুরের সালথার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা গ্রামের কৃষক সহিদুর রহমান সিকদারের ছেলে রফিকুল ইসলাম। চাকরিতে যোগদানের পর রফিকুলের দরিদ্র পরিবারের দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে।
সূত্র জানায়, সালথা বাজার সংলগ্ন ৩৩ নম্বর দরজাপুরা মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে সরকারি খাস জমির ৪৮ শতাংশ দখল করে রেখেছেন তিনি। পরে ওই জমিতে বাড়ি তৈরি করেন রফিকুল। ওই জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
সালথা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পশ্চিম পাশে আব্দুল মালেক শেখের নিজস্ব জমি সরকারি জমি অধিগ্রহণের নামে দখল করে। আব্দুল মালেককে নামমাত্র মূল্য দেওয়া হয়। পরে রফিকুল চড়া দামে জমি বিক্রি করেন সরকারের কাছে।
ফুকরা গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, ‘রফিকুলের চোখ পড়ে আমার এক জমিতে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি নিতে চান। জমি দিতে রাজি না হলে রফিকুল জোর করে জমি নিয়ে নেয়। পরে জানতে পারি, সরকার জমি নেয়নি, রফিকুল নিজের নামে নিয়েছে। তিনি আমাকে জমির সঠিক দাম দেননি। এখনো তার কাছ থেকে জমির টাকা পাই। ‘
ফুকরা গ্রামের আরেক বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, ফুকরা গ্রামে সরকারি খাল দখল করেছেন রফিকুল ইসলাম। হল্টের ৮৪ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন রফিকুল। তিনি বলেন, সরকারি খাস জমি দখলের অধিকার সবার আছে, রফিকুল ইউএনও অফিসে চাকরির সুবাদে সবাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেই জমি দখল করেছে। শুধু এখানেই নয়, উপজেলার বিভিন্ন সরকারি জমি দখল করে রেখেছে রফিকুল।
ভাওয়াল ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শফিউদ্দিন সিকদার বলেন, সালথা বাইপাস সড়কে সরকারের অধিগ্রহণকৃত জমির ৫ শতাংশ দখল করে রেখেছে রফিকুল। তার বিরুদ্ধে একাধিক সরকারি জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে। ফুকরা গ্রামের সরকারি কুঁড়েঘর দখলের ব্যবস্থা নিতে ইউএনও স্যারকে বলেছি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বাড়ি নির্মাণের সময় গরিবদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে রফিকুলের বিরুদ্ধে। রফিকুল তৎকালীন ইউএনও হাসিব সরকারের মানহানি করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রুপা বেগম, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে বাড়ি প্রতি ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা নেন।
এছাড়া রফিকুল ইসলাম, তার বাবা সহিদুর রহমান ও ভাই রকিবুল ইসলাম বাড়ি ক্রয় ও নির্মাণ তদারকি করেন। বাড়িগুলোতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নারান্দিয়ার বাসিন্দা কহিনুর বেগমও একটি বাড়ি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রুপা বেগম বাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। তাকে আট হাজার টাকা দিলাম। বাড়ির ছাদের জন্য ছয় বস্তা সিমেন্ট কিনেছি। নারান্দিয়ার বাসিন্দা চাঁন মিয়া বলেন, সালথা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাড়িটির জন্য ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে আমি তার হাত-পা ধরে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ক্ষমা করি। ৩০০ ফুট বালি কিনে আট বস্তা সিমেন্ট দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, বাড়ি নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।
সালথা উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান রুপা বেগম বলেন, টাকা নেওয়া তো দূরের কথা, কারো কাছ থেকে একটা মিষ্টিও খাইনি।
সালথা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাদল হোসেন বলেন, ‘রফিকুলের চাপে এলাকার মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। তাকে বদলি করা হলেও জমিগুলো খালি হয়নি।