শরীফের সুপারিশ নিয়ে দুদকের উল্টো গতি
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে থাকাকালীন তার প্রতিবেদনে ৫১টি মামলার সুপারিশ করেছিলেন। প্রস্তাবিত এসব মামলায় অনিয়ম-দুর্নীতির পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। অন্যদের মধ্যে তিনি ১৯ জন আমলা, অর্ধশত প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধির ।৩৬ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির সম্পদ অনুসন্ধানের প্রস্তাবও পাঠিয়েছেন তিনি। তার তদন্তে জানা যায়, তারা জাতীয় পরিচয়পত্র, জমি অধিগ্রহণ, পাসপোর্ট, টেন্ডার, নিয়োগ ও পদোন্নতির বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু দুদক মামলার অনুমতি দেয়নি, সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিশ দিতেও রাজি হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, বদলির পর শরীফ উদ্দিনের প্রায় সব সুপারিশই হিমাগারে চলে গেছে। বেশ কিছু মামলা পুনঃতদন্ত করতে বলা হয়েছে। এটা আসলে সময়ের অপচয়। এ ছাড়া তার হাতে যেসব ঘটনা তদন্ত পর্যায়ে ছিল সেগুলোও থমকে আছে। তবে শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত দুদক।
চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, “সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দুদককে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এখন প্রভাবশালীদের চাপে বিচার বাধাগ্রস্ত হলে তার দায় দুদককেই নিতে হবে। উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন তার তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। পুনঃতদন্তের নামে বিলম্ব করা ঠিক নয়। প্রভাবশালীদের বাদ দিয়ে মামলা করলেও বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
দুদকের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শরীফ উদ্দিন রোহিঙ্গা এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ২০টি মামলা করেছিলেন। কিন্তু তিনি বদলি হওয়ার পর এসব মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। তিনি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নিয়োগ, চুরি ও প্রচার বাণিজ্যে রাঘববোয়ালদের জড়িত থাকার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে আটটি মামলা করার জন্য কেন্দ্রের কাছে একটি সুপারিশ পাঠান। ২০২০ সালের অক্টোবরে, আরও তিনটি পৃথক মামলার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধান কার্যালয় এই ১১টি সুপারিশের মধ্যে মাত্র একটি অনুমোদন করে। ২০২১ সালের ১০ জুন দায়ের করা মামলায় সাবেক মন্ত্রীর ছেলে মজিবুর রহমানসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলির আগে শরীফ উদ্দিন আটটি নতুন মামলার সুপারিশ করেন। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সুপারিশ পাঠানো হয়নি বলে গতকাল জানান শরীফ উদ্দিন।
দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনুমোদন ছাড়াই অভিযোগ পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে দুদক। পুনঃতদন্তের কোন কারণ জানানো হয়নি।
শরীফ বলেন, তার বদলির পর বাংলাদেশ রেলওয়ের ৬৩ জন খালাসপ্রাপ্ত নিয়োগের মামলাও থমকে গেছে। চট্টগ্রাম এলএ শাখায় দুর্নীতি, রাঙ্গুনিয়া ভূমি অফিসে দুর্নীতি, প্লট জালিয়াতির অভিযোগে গণপূর্তের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা, আবাসনের বিরুদ্ধে মামলা, আরএফ বিল্ডারদের বিরুদ্ধে মামলা, মহেশখালীতে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সম্পদ অনুসন্ধান।
শরীফ স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামে পাঁচটি মামলা করার সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই অনুমোদন পায়নি। কক্সবাজারে জমি অধিগ্রহণ মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এনআইডি ও পাসপোর্ট মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের অধিকাংশই এখন জামিনে রয়েছেন।