কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ ভবন।ছাদের বাগানে ফুল আর ইতিহাসের মেলবন্ধন

0

এ যেন ফুলের রাজ্য। প্রবেশ করলেই ফুলের সমারোহ ও সুবাসে মন-প্রাণ ভরে ওঠে। শুধু তাই নয়, একই মোহনায় এসে মিশেছে ইতিহাস ও আঞ্চলিক ঐতিহ্য। বলছি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ ভবনের সুন্দর ছাদ বাগানের কথা।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খানের নেতৃত্বে নির্মিত ‘শেখ রাসেল রুফটপ বোটানিক্যাল গার্ডেন’ নামের এই দৃষ্টিনন্দন ছাদ বাগান দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন। এই ছাদ বাগানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধ শতাধিক ফুলের চারা, দেশি-বিদেশি প্রায় অর্ধশত প্রজাতির ফল ও ঔষধি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গোড়ায় তার নাম ও ঔষধি গুণাবলী লেখা থাকে। ফুলের বৈচিত্র্য এবং মিষ্টি সুবাস পুরো ছাদ বাগানকে এক অনন্য সৌন্দর্য দেয়।

ফলের চারাগুলির মধ্যে রয়েছে সাদা, থাই হোয়াইট, চাইনিজ পেয়ারা, চায়না লিচু, মিষ্টি তেঁতুল, পিচ ফল, চায়না কমলা, দার্জিলিং কমলা, থাই আম, ডকমাই আম, ব্রুনাই কিং ম্যাঙ্গো, চায়না ড্রপ ম্যাঙ্গো, হিমসাগর আম, আম্রপালি, নারকেল, ভিয়েতনামি ছাড়াও। গাব, স্ট্রবেরি, সাদা বেরি, থাই শেরেফা, লাল আমলকি, হাইব্রিড বেল, কদবেল, বারোমাসি কাঁঠাল, ডালিম ও মাল্টাসহ নানা ধরনের দেশি-বিদেশি ফল ও ঔষধি গাছের পাতায় শোভা পাচ্ছে।

এখানে একই সঙ্গে বেড়ে উঠছে ফুল, ফল ও ভেষজ।

বাগানের এক পাশের দেয়ালে রাখা হয়েছে শেখ রাসেল কর্নার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের অনেক দুর্লভ ছবি এখানে রাখা হয়েছে। এই কর্নারের সামনে দাঁড়ালে যে কোনো দর্শনার্থী কিছুক্ষণের জন্য হলেও আবেগাপ্লুত হবেন। বাগানের অপর পাশের দেয়ালে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে। এ কোণে জাতির জনকের দীর্ঘ রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনের দুর্লভ ছবি খোদাই করা হয়েছে। বাগানের মাঝখানে পিভিসি ডিজিটাল ব্যানারের ফ্রেমে কিশোরগঞ্জ জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রদর্শন করা হয়েছে।

এছাড়াও এখানে আলোকচিত্র সহ ঐতিহ্যবাহী এই জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় নারী কবি চন্দ্রাবতী, বাংলা শিশু সাহিত্যের পথিকৃত উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী, অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সুকুমার রায়, সাংবাদিক নীহার রঞ্জন রায় এবং স্বনামধন্য শিল্পী জয়নুল আবেদীন। চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের খ্যাতিমান নেতা মোহন কিশোর নমোদাস প্রমুখ।

ছাদ বাগানের বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ বলেন, প্রথমে তিনি একাই চিন্তা করলেও পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসুমা আক্তারসহ উপজেলা পরিষদের সকল সদস্য ও কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সহযোগিতা করেন। বাগান নির্মাণে সহায়তা। তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মকে ছাদ বাগানে আগ্রহী করে তুলতে ইতোমধ্যে উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বাগান পরিদর্শনের কার্যক্রম শুরু করেছে।

ইউএনও মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, “এমন একটি ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমিও আনন্দিত। ছাদ বাগান এমন একটি বাগান তৈরিতে দর্শনার্থীদের উৎসাহিত করলে অনুষ্ঠানটি সফল হবে। দেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এই বাগান পরিদর্শন করেছেন এবং এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, “আমি আমার কর্মজীবনে এমন উদ্ভাবনী প্রকল্প দেখিনি। আমি মনে করি এই উদ্যোগটি দেশের সেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *