বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন।’খুব ভালো অফিসার’ শরীফ হঠাৎ ‘চলতিমান’ হয়ে গেলেন

0

মোঃ শরীফ উদ্দিন ১২ অক্টোবর ২০১৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে যোগদান করেন। তিনি ময়মনসিংহে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি বরখাস্ত হওয়ার আগে সাড়ে সাত বছরের কর্মজীবনে তাকে তার কর্মস্থল থেকে ছয়টি বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) দেওয়া হয়। ‘খুব ভালো’ কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে, পাল্টা স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা এক বছর সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন – ‘কাজে আগ্রহী এবং আন্তরিক’, আরেকটি বছর – ‘সর্বদা দায়িত্বশীল’, আরেকটি বছর – ‘সম্ভাব্য কর্মক্ষমতা’, পরের বছর – ‘দক্ষ কর্মকর্তা’, তারপর – ‘ তদন্তে অভিজ্ঞ’। ২১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এসব মন্তব্য করা হয়। পরবর্তী সময়ে রিপোর্টিং অফিসারের মন্তব্যে ‘চলতিমান’ হয়ে ওঠেন তিনি।

জানা গেছে, শরীফ উদ্দিন ২০১৯-২০ সালে কক্সবাজারে জমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের দুর্নীতির কথা প্রকাশ করেন।

প্রতিবার পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হলেও চাকরি জীবনে শরীফ উদ্দিন কখনো পদোন্নতি পাননি। গত বছরের ২১ নভেম্বর তার ব্যাচের ২৯ জন সদস্যকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তিনি বঞ্চিত। কর্মজীবনে একটি মামলাও করেননি এমন কর্মকর্তাদেরও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

শরীফের ২০২০ সালের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের দ্বিতীয় খণ্ডে শরীফ বলেছেন, “অহংকার করার প্রবণতা রয়েছে।” ২৩ নম্বর ক্রমিকের কলামে লেখা আছে- ‘সময়ানুবর্তী নয়’। তবে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর প্রধান কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে এ মন্তব্যের যৌক্তিকতা আছে কি না, তার ব্যাখ্যা ও প্রমাণ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিধান অনুযায়ী এসিআর-এ এ ধরনের মন্তব্য লিখতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রথমে মৌখিক বা লিখিতভাবে সংশোধনের পরামর্শ দিতে হবে। দেওয়া হয়েছে কিনা তার প্রমাণ চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।

শরীফ উদ্দিন বলেন, “এসিআরে নেতিবাচক মন্তব্য করা হলেও নিয়ম মানা হয়নি। এরকম মন্তব্য লিখতে হলে আগে দেখাতে হবে। উত্তর সন্তোষজনক না হলেই একজন কর্মকর্তাকে এসিআরে নেতিবাচক মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু গত দুই বছরে কেউ এই নিয়ম মানেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

শরীফ উদ্দিন অভিযোগ করেন, কর্মজীবনে একটি মামলাও করেননি এমন কর্মকর্তাদেরও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আমার তিন বছর সাত মাসের চাকরিতে শুধু চট্টগ্রামেই আমি ৫৫টি মামলার সুপারিশ করেছি। আমি ১৫টি মামলার চার্জশিট দাখিল করেছি। আমি ১৩৪টি সম্পদ ঘোষণা জমা দেওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছি। আমার মামলায় প্রায় ২৫ আসামি গ্রেফতার হয়েছে। এরপরও আমার পদোন্নতি হয়নি।

শরীফ উদ্দিন দাবি করেন, পদোন্নতির লিখিত পরীক্ষায় তিনি ৮৬ নম্বর এবং মৌখিক ২০ নম্বরের মধ্যে ১৫ নম্বর পেয়েছেন।

জানতে চাইলে সুশাসন চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আক্তার কবির চৌধুরী বলেন, ঊর্ধ্বতনদের তদবির উপেক্ষা করে একের পর এক মামলা করেছেন। এতে ঘরের বাইরে তার শত্রু বেড়েছে। সাহসী অফিসারের ভবিষ্যত রাষ্ট্রকেই নির্ধারণ করতে হবে। শরীফ কোথাও অন্যায় করলে তার বিচার হোক। কিন্তু শরীফরা বিনা অপরাধে হেরে গেলে দুদকের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *