মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।গবেষণা নেই, স্মৃতিকথা সেমিনারে আটকে আছে

0

দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণা, সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহান বাংলা ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় দিন ২১শে ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা দেশের জন্য গৌরবের। তবে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটি তার উদ্দেশ্য পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সেমিনার আয়োজন, নিউজলেটার ও স্মৃতিকথা প্রকাশ করা এবং বাংলা বানান শেখানোর সীমিত কাজ হয়েছে।

কোনো গবেষণামূলক কাজ করা হয়নি। উল্লেখ্য, দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা নিয়ে ‘নৃতাত্ত্বিক বৈজ্ঞানিক জরিপ’-এর কাজ গত এক দশকে শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও এই জরিপের ফলাফলের পূর্ণাঙ্গ কোনো প্রকাশনা নেই। মাত্র এক খন্ডের কাজ শেষ হয়েছে।

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ এর সংক্ষিপ্ত নাম থেকে প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি নাম ‘IMLI’।

ইনস্টিটিউটটি ইউনেস্কোর ক্যাটাগরি-২ ইনস্টিটিউট, জাতিসংঘের শিক্ষাগত, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা কর্তৃক নভেম্বর ২০১৫ সালে স্বীকৃত হয়েছিল। ভাষাবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে গবেষণা কার্যক্রমের অভাবে এই স্বীকৃতি বাতিল হয়ে যাবে।

মূলত ফেব্রুয়ারি মাস এলেই এখানে একটু ভিড় শুরু হয়। বছরের বাকি সময় সংবাদপত্র প্রকাশ ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংস্থাটি আমলাদের দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি শাখায় পরিণত হয়েছে। কাজের মতো অবকাঠামো স্বাধীনভাবে তৈরি হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দ্বারা চলমান। কোনো স্বীকৃত ভাষা গবেষক নিয়োগ করা হয়নি এবং এ ধরনের কোনো নিয়োগ নীতি এখনও গৃহীত হয়নি।

ইনস্টিটিউটের ক্ষেত্রে যেমন: ইনস্টিটিউটের জন্য ২৩টি চাকরি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চার-পাঁচটি সম্পূর্ণ এবং কিছু আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। বিদেশে বাঙালির প্রসারে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ জানা যায়নি। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বাংলা উচ্চারণ ও বানান শেখানোর কাজ করেছে। এই ইনস্টিটিউটের কাজটি বেশ কয়েকটি বুলেটিন এবং জার্নাল প্রকাশ, সেমিনার এবং কর্মশালার আয়োজন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন এবং ভাষা পদক প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভ ও একটি ভাষা জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। তবে প্রচারের অভাবে দর্শনার্থী তেমন একটা আসে না।

শিক্ষামন্ত্রীর কার্যালয় বর্তমানে সেগুনবাগিচায় ইনস্টিটিউট ভবনে। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য জাতীয় কমিটির কার্যালয় ভবন করা হয়েছে।

ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. জিন্নাহ ইমতিয়াজ আলী। গত নভেম্বরে তিনি অবসরে যান। সে এই মন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি. পরে ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভাষা, গবেষণা ও পরিকল্পনা) শফিউল মুজ নবীনসহ একাধিক উপ-পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ভাষা জাদুঘরে ১১০টি ডিসপ্লেতে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। তবে করোনার কারণে কার্যক্রম অনেকটাই বিলম্বিত হয়েছে। তারা জানান, বিপন্ন ভাষাগুলোকে সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যে কেউ, শিক্ষাবিদ বা প্রতিষ্ঠান এই গবেষণায় অংশ নিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *