ভাষা শহীদ।স্মৃতি জাদুঘরে রফিকের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই

0

বায়ান্নের মাতৃভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিক উদ্দিন সরকারিভাবে একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় নিজ গ্রামে একটি জাদুঘর ও পৈত্রিক বাড়িতে একটি বাসভবন, একটি শহীদ মিনার ও একটি পাঠাগার নির্মাণ করেছেন। তবে রফিকের নিজের গ্রামের অনেকেই জানেন না তার আত্মত্যাগের গল্প।

রফিকের জন্মস্থান মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জেলা পরিষদের অর্থায়নে স্থানীয় এক ব্যক্তির দানকৃত জমিতে ২০০৮ সালে বাহশহিদ রফিক উদ্দিন আহমেদ পাঠাগার ও স্মৃতি জাদুঘর চালু হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা জাদুঘরটি দেখতে আসেন।

শিক্ষা, জ্ঞান ও বিপ্লবের আগুনে সিংগাইরের পারিল গ্রামে ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ ড. রফিক উদ্দিন আহমেদ। প্রেস ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ ও রাফিজা খাতুনের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে রফিক উদ্দিন আহমেদ প্রথম সন্তান।

রফিক ছোটবেলা থেকেই প্রাণবন্ত। তিনি সুই ও সুতো দিয়ে নকশা আঁকতে পারদর্শী ছিলেন। রফিকের একটা দুষ্টুমি ছিল গাছে উঠে। গাছে উঠতে গিয়ে একবার তার পা ভেঙে যায়। এ সময় তাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়। পরে তার বাবা তাকে কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। কিন্তু সেখানে তার মন ছিল না। কয়েক বছর পর দেশে ফিরে আসেন। তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ভাষার জন্য শহীদ হন।

শহীদ রফিক জাদুঘরের সামনে তিনি কৃষক লেবু মিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। তার ভাষায়, রফিক একজন ‘বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা’। জাদুঘরে প্রবেশ করে বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীকে সেলফি তুলতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সাথিয়া সাথী বলেন, ‘রফিক একজন ভাষা শহীদ। ১৯৭১ সালে তিনি দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। আরও অনেকে জানতে চাইলে শহীদ রফিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারেননি। এমনকি তাদের বাড়ির সাধারণ গৃহিণীরাও জানেন না তার কীর্তি।

তবে দু-একজন বলতে পেরেছেন রফিকের আত্মত্যাগের কারণেই আজ আমরা মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে পারছি। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে ২১ ফেব্রুয়ারি। পারিলের কাছে নওথা গ্রামের কলেজ ছাত্রী তাহমিনা আক্তার জানান, সময় পেলেই তিনি এখানে আসেন। এই জাদুঘরের নাম, এখানে বাহাশহিদ রফিকের কোনো স্মৃতি নেই। তিনি শুনেছেন, শহীদ রফিকের পরিবারের কাছে তার জিনিসপত্র আছে। এগুলো জাদুঘরে রাখার দাবি জানান তাহমিনা।

শহীদ রফিকের ভাগ্নে। শহীদ পরিবারের সদস্য হলেও তার চাকরি এখনো অস্থায়ী। জাদুঘরের সামনে একটি শিশু পার্ক রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

শুধু নামকরণঃ সিংগাইরের বলধরা ইউনিয়নের উত্তর পারিল গ্রামের নাম ২০০৮ সালে পরিবর্তন করে রফিকনগর করা হয়। কিন্তু সাইনবোর্ডে রফিকনগর লেখা থাকলেও সরকারিভাবে এখনো পারিল গ্রামের নাম পরিবর্তন করা হয়নি।

মানিকগঞ্জে শহীদ রফিকের নামে বলার কিছু নেই। নগরীর প্রধান সড়কের নামকরণ করা হয়েছে বাহাশহীদ রফিক রোড এবং খালপাড় মোড়ে রফিক চত্বর। এছাড়া মানিকগঞ্জের ধল্লা এলাকায় নির্মিত সেতুটির নামকরণ করেন শহীদ রফিক সেতু ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কোনো নামফলক নেই।

শহীদ রফিকের ছোট ভাই খোরশেদ আলম জানান, রফিকের তেমন স্মৃতি তাদের নেই। পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, টেবিল, চেয়ার ও কাপড়ের ওপর রফিকের হাতে নকশা করা টেবিলক্লথ রয়েছে। জাদুঘরে সংরক্ষণের অভাবে তা দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, শহীদ রফিকের পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত সব ক্রেস্ট ও সম্মাননা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করলে জাদুঘরে দান করবেন।

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, তার ব্যবহৃত কোনো জিনিস পরিবার থেকে দিলে তা যথাযথ মর্যাদায় জাদুঘরে রাখা হবে। কেউ জমি দান করলে রফিকনগরে বাহাশহীদ রফিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *