প্রদীপের ধন-সম্পদ কাজে লাগল না, তার স্ত্রী-সন্তানরাও তাকে দেখতে আসেনি

0

চট্টগ্রামের পাথরঘাটা মোড়ের কোতোয়ালি থানা থেকে পাঁচ গজ দূরে বাড়িটির নাম ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’। ছয় তলা ভবনের গেটে ঘিয়ে রঙের মাঝখানে লাল ইটের নকশা কাটা ‘অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ’ লেখা একটি চিহ্ন। দারোয়ান বললেন, ‘ভবনের মালিক ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। ঘটনার পরপরই জামায়ের রায়ের পর স্ত্রী পালিয়ে যায়। এমন সম্পদ করে লাভ  কি ?

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপ দাসের বাড়িটা এখন সুনসান নীরবতা। বোয়ালখালীতে তার পৈতৃক বাড়িটিরও একই অবস্থা। প্রদীপের পাশে কেউ নেই। গত বছরের আগস্টে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী চুমকি পলাতক। জেলে বা আদালতে একবারও প্রদীপকে দেখতে যায়নি স্ত্রী-সন্তানরা।

ওসি প্রদীপের গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর কাঞ্জুরী গ্রামে। এই বাড়িতে তার তিন সৎ ভাই থাকে। বোয়ালখালী সংবাদদাতা জানান, প্রদীপের বড় ভাই রঞ্জিত দাস বোয়ালখালীতে চায়ের দোকান চালান। রঞ্জিত দাস (৭৮) তার ছোট ভাই প্রদীপের মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

চট্টগ্রামে এক নারীর জমি দখলের অভিযোগে প্রদীপ দাসকে পুলিশের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কাঞ্জুরী গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রদীপ ওই এলাকার অন্য মানুষের জমিও দখল করে রেখেছে। ভাইদের সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। এমনকি গরিব ভাইদেরও সহযোগিতা করেননি।

প্রদীপ দাসের স্ত্রী ও সন্তানদের হদিস জানা যায়নি। চুমকি করণের বাবা অজিত কুমার করণ একাধিকবার বলেছেন যে তিনি জানেন না তার মেয়ে কোথায় আছে। প্রদীপকে গ্রেফতার করার পর চুমকির সঙ্গে কথা হয়নি।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদক মামলা করছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রদীপ দাস ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন করেছেন। চুমকি বলেই গৃহিণী। তার আয়ের কোনো উৎস জানা নেই। এরপরও তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখটাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছেন।

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, প্রদীপ দাস তার বেশিরভাগ সম্পদ তার স্ত্রীর নামে রেখেছেন। চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে একটি বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি প্রাইভেটকার, একটি মাইক্রোবাস, একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তার নামে ৫ কোটি টাকার সম্পদের বিপরীতে রয়েছে। চুমকি নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী বলে দাবি করলেও দুদক তার ব্যবসার অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি।

দুদকে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, পাথরঘাটায় বাড়িটি চুমকিকে তার বাবা ২০১৩ সালের দানপত্রের মাধ্যমে দিয়েছিলেন। তবে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ তার শ্বশুরের নামে জমি কিনেছেন। অবৈধ সম্পদ গোপন করার আইন। জমি তৈরি করেছেন। এরপর শ্বশুর স্ত্রীর নামে বাড়িটি দান করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *