শাবি উপাচার্যকে সরানো হচ্ছে
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সংকটের অবসান ঘটছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে। বর্তমান উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অপসারণ করা হচ্ছে। শাবিপ্রবি থেকে নতুন উপাচার্য হিসেবে একজন শিক্ষক নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার। এরই মধ্যে কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। সিদ্ধান্তে নাটকীয় পরিবর্তন না হলে দু-একদিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। বুধবার সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
হলের চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরীর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতেই শতাধিক শিক্ষার্থী আন্দোলনে যোগ দেয়। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে। এসময় শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের গতি পরিবর্তিত হয়। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা দাবিতে আন্দোলন রূপ নেয়। এক সপ্তাহ পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অনশন শুরু করে। সাতদিনের অনশন শেষে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের পানি দিয়ে অনশন ভাঙেন। তবে অনশন ভাঙার পরও মূল দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, শাবিপ্রবির আন্দোলনের পরিস্থিতি ও সার্বিক বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে নানা তথ্য উঠে এসেছে। এসব প্রতিবেদন নীতিনির্ধারণী বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। শুধু শাবিপ্রবি নয় ভবিষ্যতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা বাঞ্ছনীয় বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া শাবিপ্রবির ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে ওই বিশ্ববিদ্যালয় বা বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের যে কোনো উপযুক্ত শিক্ষককে মনোনীত করা যাবে।
একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে বর্তমানে আলোচনায় থাকা দুই শিক্ষকের নাম হলো অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস ও বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ড. আনোয়ারুল ইসলাম।
বিশিষ্ট ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ক্যাম্পাসের ভেতর বা বাইরে থেকে শিক্ষক নির্বাচন করা বড় কথা নয়। সবার আগে দেখতে হবে সে যোগ্য কিনা। অবশ্যই ভাইস চ্যান্সেলরকে একজন ভালো শিক্ষাবিদ হতে হবে। তার মধ্যে অভিভাবক গুণ থাকা জরুরি। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে একজন ভাইস চ্যান্সেলর একজন প্রশাসক নন। শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তার সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হওয়া উচিত। শাবিতে বর্তমান আন্দোলন কর্মসূচির সমন্বয়ক মোহাইমিনুল বাশার বলেন, আন্দোলনকারীদের মূল দাবি ভিসির অপসারণ। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতারকৃত সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর দ্রুত মুক্তি, পুলিশের হামলায় আহত ও অনশনকারীদের চিকিৎসার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। উপাচার্যের পদত্যাগসহ সব দাবি মেনে নিচ্ছে সরকার। জাফর ইকবাল আমাদের জানান। আমরা তার কথা বিশ্বাস করি। তার কারণে অনশন ভাঙা হয়েছে।
শাবিপ্রবির শিক্ষক সমিতির প্রধান অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস বলেন, সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়। শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করা উচিত নয়। শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছে, এটা খুবই ভালো খবর। তবে উপাচার্য পরিবর্তনের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তুলসী দাস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু থেকেই আমলে নেননি উপাচার্য। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি কোনো আলোচনা করেননি, কোনো বিবৃতিও দেননি। বর্তমান ভিসির এমন একগুঁয়ে মনোভাব আন্দোলনের গতি আরও বেগবান করেছে।
সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ভিসিবিরোধী আন্দোলনের ছায়া পড়েছে। বর্তমান উপাচার্য সিলেটের বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডারসহ অন্যান্য কাজে উপাচার্য তাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে উপাচার্যের দূরত্ব রয়েছে।
শাবি প্রবীরের বর্তমান আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাম সংগঠনগুলো তাকে নানা উসকানি ও মদদ দিয়ে বিভিন্ন মহলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে একে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করার প্রবণতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটি সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।