সরেজমিন: রাজধানীর তিনটি হাসপাতাল।অব্যবস্থাপনায় ভুগছেন রোগীরা।
ক্রমবর্ধমান নমুনা ও করোনা রোগীর সংখ্যা, সিট ও আইসিইউ সংকট দেখা দিয়েছে
মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডের বাসিন্দা ইউসুফ আলী কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। শরীরে ব্যথা সহ করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ। গতকাল সকাল ৯টার দিকে তিনি করোনা পরীক্ষা করতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। কিন্তু ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পর জানতে পারেন দুপুর ১২টার আগে নমুনা নেওয়া হবে না। এরই মধ্যে তার মতো ছাপ্পান্ন জন সেখানে জড়ো হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। তারপর তারা জানবে যে যারা ইতিমধ্যে হটলাইনে তাদের নাম নিবন্ধন করেছেন শুধুমাত্র তাদের নমুনা নেওয়া হবে।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষার পরও নমুনা দিতে না পারায় ফিরে আসেন প্রায় শতাধিক নগরবাসী। ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে তারা বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের নিয়মকানুন মেনে চললেও কী করতে হবে তা এখনও তারা জানেন না। তা ছাড়া গণমাধ্যমে এ বিষয়ে তাদের কোনো প্রচারও দেখা যায়নি। কিন্তু এখানে আসার পর অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে তা জানতে হয়। যারা নমুনা দিতে পারেন তাদের অনেকেই তাদের মোবাইল ফোনে বার্তা পাচ্ছেন না। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান বলেন, তারা প্রতিদিন ৯৪ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেন। দুই কালেক্টর দিয়ে এর বেশি নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। যারা আগের দিন সিরিয়াল দেয় তাদেরই পরের দিন নমুনা নেওয়া হয়। এ ছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডে কিছু রোগী রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন দুই শিফট চালু হলে আরও নমুনা সংগ্রহ করা যাবে। তবে, তারা দেখতে পাচ্ছেন যে তাদের হাসপাতালে নমুনা নেওয়া প্রতি আটজনের মধ্যে ছয়জনের রিপোর্ট পজিটিভ। এবং সংক্রমণের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি নমুনা নিতে আসা লোকের সংখ্যাও বাড়ছে। বাস্তবতা হলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন বেশি মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতে পারছে না।
হাসপাতালের মূল ভবনের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে খোলা জায়গায় অস্থায়ী শেড নির্মাণ করে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নমুনা সংগ্রহকারীদের দীর্ঘ লাইন ছিল।
বিএসএমএমইউতে ভোগান্তির শেষ নেই: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট পেতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কোভিড ইউনিটের কর্মীদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় হাসপাতালে জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে ভিআইপি, চিকিৎসক, প্রবাসী ও করোনা পরীক্ষার বিশেষ বিবেচনায় ভোগান্তি বাড়ছে।
মঙ্গলবার বিএসএমএমইউর করোনা টেস্ট ইউনিটে সাধারণ মানুষ এসব সমস্যার কথা জানান। হাসপাতালের প্রাক্তন রেডিও স্টেশনের এক্সটেনশন করোনা ইউনিটে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যারা অনলাইনে আবেদন করেন তাদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আবেদনের ক্ষেত্রে, নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা করার জন্য মোবাইল ফোনে একটি বার্তা দেওয়া হয়। ওই দিন ও ওই সময়ে সাধারণ মানুষকে গিয়ে নমুনা দিতে হয়।
করোনা পরীক্ষা করতে আসা যুবক আসলাম সিকদার জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি আসেন। এক ঘন্টা ধরে লাইনে আছেন। লাইনটা খুব ধীরে চলছে। বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে নমুনা পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, দায়িত্বরত কর্মীরা অসদাচরণ করেছেন। মগবাজার থেকে মায়ের নমুনা দিতে যাওয়া শিল্পী বেগম জানান, মায়ের বয়স হয়েছে। কয়েকদিন ধরে করোনার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এখানে অপেক্ষা করতে করতে তার মা আরও ক্লান্ত হয়ে পড়েন।