ডিলাররা ছুটছেন গরিবের চাল।এতে জড়িত খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা

0

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার অসহায় ওএমএস চাল ও আটা কম দামে বিক্রি করছে। প্রতিদিনই ওএমএস ট্রাকের সামনে মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ওএমএস দোকান ও ট্রাক ডিলাররা গরিবদের কাছে চাল বিক্রি না করে লুট করে নিচ্ছে। খাদ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তারা এই চাল হাওয়া করছেন। এ জন্য ডিলারশিপ বাতিল ও জামানতসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে খাদ্য পরিদর্শকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, গত রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি মনিটরিং টিম ওএমএসের ট্র্যাকসেলে আকস্মিক পরিদর্শন করে। এ সময় ডিলার ইব্রাহিম হীরার ট্রাকে ১০ বস্তা খালি চাল ও ১২ বস্তা আটা পাওয়া যায়নি। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি মতিঝিল এজিবি কলোনির ডিলার শাহজাহান বকাউলের ​​ওএমএস ট্রাক সেলে লুকিয়ে রাখা নয় বস্তা আটা উদ্ধার করা হয়। অবিক্রীত বস্তা গুনতে গিয়ে এই অনিয়ম ধরা পড়ে। এছাড়া কমলাপুরের জসিম উদ্দিন রোডে আইয়ুব খানের দোকানে ১৩ বস্তায় ৩৯০ কেজি চাল ও সাত বস্তায় ৩৫০ কেজি আটা পাওয়া গেছে। গত ১৯ আগস্ট জুরাইন ডিলার মো. শাকিলের ট্রাক সেলে ৬০০ কেজি চাল পাওয়া যায়নি। কারণ দর্শানোর জন্য জুরাইনের খাদ্য পরিদর্শক ডাহলিয়া পারভীন, রেশনিং অফিসার জয়কৃষ্ণ গুপ্ত এবং তত্ত্বাবধায়ক কর্মচারী আহসান হোসেনকে চিঠি পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এসব চাল ও আটা কালোবাজারে বিক্রি হয় বলে মনিটরিং কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন। ট্রাকে চাল-আটা বিক্রি করা ডিলারদের কাছ থেকে কোনো পারমিট নেওয়া হয়নি। এছাড়া মোহাম্মদপুর কাটাসুর ডিলার মহিউদ্দিনের দোকান ও মোহাম্মদপুর ময়ূর  ডিলার মরিয়ম বেগমের ট্রাকে মজুদ ও পরিদর্শন রেজিস্ট্রার পাওয়া যায়নি। বস্তায় বিতরণ করা সিলগুলি সম্পূর্ণ অস্পষ্ট ছিল।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার  বলেন, ওএমএস বিতরণ কার্যক্রমে অনিয়ম অনেক বেড়েছে। এ জন্য তদারকি দল গঠন করা হচ্ছে। যেসব ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আরও ভালো তদারকির জন্য ওএমএস ট্রাকের সংখ্যাও কমানো হয়েছে।

ঢাকা রেশনিংয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন  বলেন, গরিবদের চাল আত্মসাতের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলেই অনিয়ম দূর করা সম্ভব হবে। ওএমএসে অনিয়ম রোধে কঠোর ভূমিকা পালন করছেন খাদ্য অধিদফতরের তদারকি কর্মকর্তারা। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

যথাযথ তদারকির অভাবে রাজধানীর অধিকাংশ ট্রাকে ওএমএসে চাল ও আটা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। গত ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা মহানগরীর ২০টি ওএমএস ট্র্যাকসেলের মধ্যে ১০টি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ১০ ট্রাকের মধ্যে তিন মেট্রিক টন তাপ ও ​​এক টন ময়দা দেওয়া হচ্ছে পাঁচটি ট্রাকের মধ্যে। তবে বাকি পাঁচটির মধ্যে তিন টন চাল ও এক টন আটা এখনো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ১১০টি দোকানে এক টন চাল ও এক টন আটা বিক্রি হচ্ছে। ওএমএসের পরিমাণ কমানোরও প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবে অনুমোদন না নিয়েই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ওএমএসের মাধ্যমে চাল ও আটা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীতে খাদ্য অধিদফতরের আটজন তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন। এর মধ্যে সাতজনকে বদলি করা হয়েছে। এরপর ৬ ডিসেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবদের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়।

ওএমএস বিতরণ কার্যক্রম তদারকিকারী দলের নেতা এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাজা আবদুল হান্নান বলেন, ওএমএসের তদারকি জোরদার করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *