ধ্বংসস্তূপের উপর যুদ্ধবিরতি
১৫ মাস ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার আগ্রাসনের কারণে পুরো গাজা উপত্যকা এখন ধ্বংসস্তূপে। হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, গির্জা, শরণার্থী শিবির… এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ইসরায়েলি সৈন্যরা শক্তিশালী বোমা ফেলেনি।
গাজার সর্বত্র মৃত্যু ও আহতদের অসহায় আর্তনাদ। ত্রাণসহ জরুরি সেবা বন্ধ থাকায় গাজার মানুষের বেঁচে থাকা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। এমন মৃত্যুর শহরে রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টায়) যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে ইসরাইল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে ৪৬,৭৮৮ জন নিহত হয়েছে। এক লাখেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এই যুদ্ধের শুরু থেকেই বলা হচ্ছে, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। আর জাতিসংঘ বলেছে, নিহতদের ৭০ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে ২৫ শতাংশের জীবন স্থায়ীভাবে বদলে গেছে। জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টার হিসাব করেছে যে গাজার ৬৯ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলার কারণে বেশিরভাগ হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি খোঁড়াখুঁড়ি করা হাসপাতালগুলোও ওষুধের সংকটে ভুগছে। এসব বিবেচনা করে ডাব্লুএইচও বলেছে, গাজার স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
এমন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হচ্ছে। তারপরও গাজার জনগণ আশা করে যে তারা ধ্বংসস্তূপে আবারও জীবনের বীজ বপন করবে। তারা আবার উঠে দাঁড়াবে। গত বুধবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গাজার অনেক মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। যদিও ওই ঘোষণার পরও ইসরাইলি হামলায় ১২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে দেখা গেছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাস প্রথম ছয় সপ্তাহে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরাইল ৭৩৭ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। নেতানিয়াহুর প্রশাসনের পক্ষ থেকেও গতকাল এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া দাতা সংস্থাগুলো খাদ্য ও জরুরি দ্রব্য নিয়ে গতকাল অপেক্ষা করেছিল এবং কখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, তারা ত্রাণ নিয়ে গাজায় প্রবেশ করবে।