নাসিক নির্বাচন। নির্বাচনে ফিরল উৎসব।আইভির টানা তৃতীয় জয়

0

ভোটের এই দূরত্বে রেখেই ‘চাচা’ তৈমুর আলম খন্দকারকে ছেড়ে আবারও নারায়ণগঞ্জ শহরের চাবি পেলেন ‘ভাতিজি’ সেলিনা হায়াৎ আইভী। একইসঙ্গে আইভির অপরাজিত থাকার বিরল কীর্তি অক্ষুণ্ণ রইল। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে এটি তার হ্যাটট্রিক জয়। টানা তিনবার জয়ের এমন কীর্তি কোনো সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে আর কেউ করতে পারেননি।

বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভি  পেয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর পেয়েছেন ৯২,৫৬২ ভোট। ভোট শেষে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির খন্দকার জানান, ভোট পড়েছে ৫০ শতাংশ।

গত কয়েক বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংঘর্ষ, হত্যা ও জালিয়াতির মতো অনিয়ম হয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অভিযোগের মধ্যে নাসিক নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ভোটের উদাহরণ তৈরি করেছে। নারায়ণগঞ্জে অবাধ ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পেছনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির হিসাব-নিকাশকেও আমলে নিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে নারায়ণগঞ্জে ভালো ভোট বিশেষ কিছুর বার্তা দিচ্ছে। আগামী মাসে নতুন কমিশন গঠন করা হবে। এ নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে চলছে উত্তেজনা। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে সরকার। এগুলোও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জয়ের পর রোববার রাতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইভী বলেন, আইভী জনগণের। সেখানে সব সময় মানুষ ছিল। আইভী আজীবন মানুষের পাশে থাকতে চান। নৌকা এবং আইভি এখানে এক এবং একই। আইভি সাংবাদিকদের বলেন, “সবাইকে নিয়ে কাজ করা যায় না।” তবে তৈমুর চাচা যে ইশতেহার দিয়েছে সেটি ফলো করব।

আইভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী  আমাকে নৌকা দিয়েছেন তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি। আমি আওয়ামী লীগের হতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলে থাকতে চাই। আমি জয় বাংলাই বলব।’

এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৯২টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পরে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার মাহফুজা আক্তার। সন্ধ্যায় বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ফল আসতে শুরু করলে নগরীর দেওভোগে আইভীর বাসভবন ঘিরে উল্লাসে মেতে ওঠেন তার সমর্থকরা। অন্যদিকে নগরীর মাসদাই এলাকায় তৈমুরের বাসায় নেমে আসে নীরবতা। তবে কাউন্সিলর আসনে তৈমুরের ভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। ভোটের সময়, তৈমুর বলেন যে ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, যদি দৃশ্যমান অনিয়ম না হয় তবে তিনি তা মেনে নেবেন।

রবিবার ভোটের পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর। কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনো কেন্দ্র থেকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তরুণ-বৃদ্ধ সবাই আগ্রহ নিয়ে ভোটে নামেন। তবে বয়স্ক ভোটারদের ইভিএমে ভোট দিতে সমস্যা হয়। ফলে ভোটের লাইন দীর্ঘ হতে দেখা গেছে। নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আইভী বা তৈমুর কেউই বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ করেননি। সকালে শিশুবাগ স্কুলে ইভিএমে ভোট দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন আইভী। তবে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলীতে একটি কেন্দ্রে ইভিএম বিকল হওয়ার খবর পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সকালে তৈমুর ভোট দিয়ে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, কোথাও কোথাও ভোটার উপস্থিতি কম ছিল, ‘ইভিএমের কারণে’ লোক কম হতে পারে।

দুই কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ছাড়াও বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। একটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর স্ত্রী ও সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোনো কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়নি।

সকালে ভোটের সময় দুই প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আইভী দেওভোগের শিশুবাগ স্কুলে তার ভোট দিয়েছেন এবং তৈমুর সকালে ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *