ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ গ্রেপ্তার
বহুল আলোচিত ছাগলকাণ্ডে জড়িত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক্তন সদস্য মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রী লায়লা কানিজ (প্রথম স্ত্রী) কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
ডিসি তালেবুর রহমান কোন মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। দুদক সর্বশেষ ৬ জানুয়ারী তাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে। ১২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তাদের সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী (লায়লা কানিজ) এবং তার ছেলে ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রথম মামলায় লায়লা কানিজ এবং মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে যে, অভিযুক্ত লায়লা কানিজ ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকার অঘোষিত সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়াও, লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় মামলায় তার মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা গোপন এবং ৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকারও বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই মামলায় মতিউর রহমানকে সহযোগী করা হয়েছে।
এবং তৃতীয় মামলায়, প্রথম বাড়ির ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় মতিউরকেও সহযোগী করা হয়েছে।
১৫ ডিসেম্বর মতিউর রহমান এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী (শাম্মী আক্তার শিবলী) এর বিরুদ্ধে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ১২০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তাদের সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
প্রথম মামলায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য মতিউরের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার এবং ১ কোটি ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ২১৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় মতিউরের সাথে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তার শিবলীকেও আসামি করা হয়েছে। শিবলীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৭ লক্ষ ১৫ হাজার ৪৯০ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ এবং ২ কোটি ৭৫ লক্ষ ২৮ হাজার ৪৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামীদের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৭ (১) এবং ২৬ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে এক যুবক কোরবানির জন্য ১৫ লক্ষ টাকায় ছাগল কিনে আলোচনায় আসেন। এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আলোচনা শুরু হয়। বলা হয়, তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য এবং কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মতিউর রহমান।
এরপর আলোচনা মোড় নেয় মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবস্থান এবং তাদের কত সম্পদ আছে তা নিয়ে। এই আলোচনার মাঝেই মতিউর পরিবারের বিশাল সম্পদ সম্পর্কে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে।
পরবর্তীতে, গত বছরের ৪ জুন দুদক মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত অঘোষিত সম্পদের তদন্ত করে। তদন্তকালে, দুদক মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬৫ বিঘা জমি, আটটি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং তিনটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের তথ্য পায়। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ফোনে আর্থিক পরিষেবা অ্যাকাউন্ট এবং শেয়ার বাজারের বিও অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।
পরে, ২৪ জুন আদালত মতিউর, তার প্রথম স্ত্রী এবং তার সন্তানদের বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে।
এরপর, ২ জুলাই, দুদক মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে সম্পদের বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠায়। এই নোটিশের আলোকে, মতিউর, তার দুই স্ত্রী এবং তার ছেলে ও মেয়েসহ পাঁচজন ২৯ আগস্ট দুদকে তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দেন।