ব্যাংকগুলো কৃত্রিমভাবে স্বাস্থ্য ভালো দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ছাড় দিলেও খেলাপি ঋণ কমছে না
ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করে আয় দেখাতে পারছে। অনাদায়ী ঋণ দেখানো হচ্ছে নিয়মিত। ফলে অনেক ব্যাংক কৃত্রিমভাবে তাদের আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। এই সময়ে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকই করোনাকে এমন সুযোগ দিয়েছে তা নয়। গত কয়েক বছরে যখনই খেলাপি ঋণ বেড়েছে, বিশেষ পুনঃনির্ধারণ, পুনর্গঠন বা অন্যান্য উপায়ে এসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমেনি বরং বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের সাথে জড়িত একজন ব্যাংকার বলেন,২০২১ সালে ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে কিস্তির সংখ্যা বাড়ানো হলে কোনো ব্যক্তি তার পরিশোধ করার কথা তার চেয়ে কম অর্থ পরিশোধ করলেও খেলাপি হতো না। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যবসায়ী হয়তো আট বছরের জন্য ঋণ নিয়েছেন। চার বছর নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের পর হয়তো আরও ৪০০ কোটি টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে ২০২১ সালে হয়তো ১০০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে। তবে মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে এরই মধ্যে ছয় বছর সময় পাচ্ছেন তিনি। ১০০ কোটি টাকার পরিবর্তে ৬৫ কোটি টাকা দিলেও তিনি হয়তো খেলাপি হতেন না। শেষ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ দিলেও খেলাপি না করার বিধান রাখা হয়েছে। এভাবে ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও তিনি আর খেলাপি নন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা ও সোনালী ব্যাংকের এক সময়ের চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আর্থিক প্রতিবেদনে নানা সুবিধা দিয়ে ভালো দেখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা ও সুশাসনের জন্য যা কাম্য নয়। কিন্তু আসল চিত্রটা সবাই জানে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমানতকারীদের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়বে। তাহলে আমানত কমবে এবং ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও কমবে। আবার ঋণ পরিশোধ না করতে নতুন গ্রুপ গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তবে ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে কিস্তির পরিমাণ কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অতএব, মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে, অবশিষ্ট মেয়াদ ৫০% বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ২০২২ সালের জুন এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকরী মূলধন এবং চাহিদা ঋণের পরিশোধ করা হয়েছে।
কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যাংকারের মতে, ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করার সবচেয়ে বড় উপায় হলো মন্দ ঋণ কমানো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যকর ঋণ ব্যবস্থার পরিবর্তে নীতি সহায়তার মাধ্যমে কম খেলাপি ঋণকে উৎসাহিত করছে। এভাবে সাময়িকভাবে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। ঋণ পরিশোধ না করে নিয়মিত থাকার সুবিধার কারণে টাকার প্রবাহ কমছে বলে জানান তারা। ফলে কাগজে-কলমে ঋণ বাড়লেও তা অর্থনীতিতে তেমন গতি আনছে না।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, ব্যাংকারদের দক্ষতা বিচারে দুটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে কিভাবে মুনাফা হয়েছে এবং খেলাপি ঋণ কতটা নিয়ন্ত্রণ বা হ্রাস করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই চাপমুক্ত নীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একদিকে যেমন কম ঋণ পরিশোধ করেও ব্যবসায়ীদের খেলাপি থেকে মুক্ত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে প্রকৃত পুনরুদ্ধার ছাড়াই আয় দেখানোর সুযোগ দিচ্ছে। এ সুবিধার ফলে সুযোগ থাকলেও অনেকেই টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। যেহেতু আবারও সংগ্রহ না করেই আয় দেখানো হচ্ছে, সে কারণে অনেক ব্যাংকারই সংগ্রহে সমস্যা হচ্ছে না।