আশার ইভিএমেই অনেক শন্কা

0

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে গত পাঁচ বছরের সব নির্বাচনই কমবেশি প্রশ্ন ওঠেছে। মেয়াদ শেষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ভোট নিয়ে সংশয় ও সংশয়ের শেষ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, আগের রাতে ভোটে সিল মারাসহ বিভিন্ন নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারণে এসব অনিয়ম এড়ানো সম্ভব বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নাসিক নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ১৯২টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে ২০১১ সালের সিটি নির্বাচনে আংশিক কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। ভোটের দুই দিন আগে শুক্রবার ও শনিবার ভোটকেন্দ্রে মক ভোটিং করেছে ইসি। তবে ভোটার উপস্থিতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক ছিল না। আবার যারা মক ভোটিংয়ে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই এই নতুন পদ্ধতিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন আগের পদ্ধতিতেই তিনি স্বস্তি পান। এখানে কে ভোট দিচ্ছেন তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা অবশ্য ইভিএমকে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা বলতে চান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসন বিষয়ক নাগরিক-সুজন সম্পাদক ডাঃ বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসি ইভিএমের মাধ্যমে ফলাফল পরিবর্তন করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান কমিশনকে জনগণ আস্থা রাখে না, ভোটাররা তাদের বিশ্বাস করে না, কোনো রাজনৈতিক দল তাদের বিশ্বাস করে না। সেখানে পুরো বালটের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে এই কমিশনের হাতে। তার মতে, একটি ব্যালটে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে পোলিং এজেন্টের সামনে ভোট গণনা করতে হয়। ইভিএমে সে সুযোগ নেই। তাই ভোটের ফলাফল নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, চট্টগ্রাম সিটি ভোট ঘোষণার পরও ফলাফল পরিবর্তনের নজির রয়েছে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে আঙুল না মেলায় খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারও ভোট দিতে পারেননি। বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইভিএম মেশিন জটিলতায় একাধিক কেন্দ্রে দুই ঘণ্টা তিন ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার রাতে ভোট কেন্দ্রে আগে থেকে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এই নির্দেশে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

ইসির এ নির্দেশনাকে প্রতারণার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতা ও স্বতন্ত্র মেয়র দলের সাবেক নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। ইসির দপ্তর সচিব হুমায়ুন কবির খন্দকার অবশ্য এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। এসব শঙ্কা কাটিয়ে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনে নানা অনিয়ম ঠেকাতে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে ভোটারদের নতুন এই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছে। এসবের ওপর ইসির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কমিশনের সিদ্ধান্তে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সুযোগ নেই।

এদিকে ইভিএমের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। ভোট কেন্দ্রে বিদ্যুত না থাকায় এবং প্রিসাইডিং অফিসারের ৫০ শতাংশ ভোট খোলার ক্ষমতা নিয়ে অতীতে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে ইসি। তারা বলছেন, গত ঢাকা সিটি ভোটের পর প্রিজাইডিং অফিসারের আর ভোট খোলার ক্ষমতা নেই। প্রতিবন্ধী বা আঙুলে সমস্যা আছে এমন ভোটারদের মাত্র এক শতাংশ ভোট খোলার ক্ষমতা প্রিসাইডিং অফিসারের রয়েছে। ইভিএম মেশিনে ব্যাটারি ব্যবহার করা হচ্ছে যা ২৪ ঘন্টা চলতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি কার্যালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ৩৩৩টি ভোটকেন্দ্রের জন্য দুই হাজার মেশিন পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে মেশিন ব্যবহার করা হবে। বাকিগুলো ব্যাকআপ হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রে কারিগরি বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে। এবার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তারপরও মোবাইল টিম থাকবে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে কারিগরি বিশেষজ্ঞ থাকবেন। এরপরও কোনো কেন্দ্রে কোনো সমস্যা হলে মোবাইল টিম চলে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *