সুপারিশে আপত্তি প্রশাসনিক ও শিক্ষা ক্যাডারের
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ করার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র আপত্তি রয়েছে। তারা বলছেন, তারা এই সুপারিশ মানবে না। অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না করে আলাদা কমিশনে রাখার সুপারিশে আপত্তি জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রকাশিত হওয়ার পর ওইদিন রাতে রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ করার সুপারিশের প্রতিবাদ করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা এই সুপারিশ মানবে না বলে জানিয়েছেন। তারা চান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উপসচিব পদের ৭৫ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য এবং ২৫ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে।
এ ছাড়া বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন বুধবার এক প্রতিবাদ পত্রে বলেছে, শিক্ষা ক্যাডার বিলুপ্ত করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করতে যাচ্ছে, তা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে সমিতি। একই সঙ্গে এই ক্যাডার বিলুপ্ত করলে শিক্ষা খাত ও শিক্ষা প্রশাসনে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংগঠনটির নেতারা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রতিবাদ পত্রে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘গণপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারকে কাঠামোর বাইরে রাখার সুপারিশ করতে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে আমরা জানতে পেরেছি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬,০০০ সদস্যের একমাত্র মুখপাত্র বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি এই সুপারিশকে সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা ২০১২ সালে অনুরূপ একটি প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছি। বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সকল বৈষম্য দূরীকরণ এবং সংস্কারের মাধ্যমে গতিশীল, জনবান্ধব জনপ্রশাসন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের এ ধরনের সুপারিশ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বৈষম্যবিরোধী চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এই সুপারিশ প্রত্যাহার না করলে কার্যকর প্রশাসনিক সংস্কার ব্যর্থ হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এ ধরনের প্রস্তাব প্রণয়ন করা এবং গণমাধ্যমে একতরফাভাবে প্রচার করা কমিশন নেতৃত্বের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এটা শিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। এ ধরনের সিদ্ধান্তে শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষা প্রশাসন ও সংস্কার কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি কোনো দায় নেবে না।
প্রত্যুত্তরে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা ক্যাডারকে সঙ্কুচিত করার এবং শিক্ষাকে অমনোযোগী করার এই প্রচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ করছি। অবিলম্বে এই প্রচেষ্টা বন্ধ করার জন্য আমি দৃঢ়ভাবে অনুরোধ করছি।’
প্রসঙ্গত, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণ পরিষদ সরকারের উপ-সচিব ও তদূর্ধ্ব পদে ‘কোটা পদ্ধতি’ বাতিল এবং উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগসহ একাধিক দাবি জানিয়ে আসছে। কর্মকর্তার সংখ্যার দিক থেকে বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বড় ক্যাডার। এ দুটি বিভাগকে ক্যাডারে রাখা হবে কি না, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এবার বিসিএস থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার হিসেবে আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
পিএসসি থেকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনকে যেভাবে আলাদা করা হয়েছিল, সেভাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারদের আলাদা করার পরিকল্পনা কমিশনের। প্রয়োজনে বিশেষায়িত হিসেবে এ দুটি বিভাগে বেতন বাড়ানো যেতে পারে বলেও মনে করে সংস্কার কমিশন।
মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে বিআইটিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে কমিশনের প্রধান আবদুল মুঈদ চৌধুরী এবং সদস্য সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মোখলেস উর রহমান কিছু তথ্য উপস্থাপন করেন। তাদের সুপারিশ। তবে সুপারিশ বহাল রাখা বা না রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের।