পঞ্চাশে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ।প্রানের সঞ্চারী গবেষণা কম

0

স্বাধীনতার সঙ্গী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গত ৫০ বছরে দেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সকল নান্দনিক ধারা নিয়ে এসেছে। উপমহাদেশের অন্যতম নাট্যকার ও লেখক সেলিম আল দীন এবং খ্যাতিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির মতো তারকারা এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তৈরি হয়েছেন।

দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ন্যায্য অংশ। বিদ্যালয়টি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পরিযায়ী পাখির আবাসের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা। আজ ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ বছরে পা দিচ্ছে।

এটি দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ও। ধীরে ধীরে কিছুটা আবাসিক চরিত্র হারিয়ে ফেললেও জাবি আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসছে। এখানে ৬,০০০ আসনের ১০তলা বিশিষ্ট  ৬টি অত্যাধুনিক আবাসিক হল নির্মাণ করা হচ্ছে।

বিগত ৫০ বছরের উত্থান-পতনেও বিশ্ববিদ্যালয়টি তার স্বতন্ত্রতা ধরে রেখেছে। নানা ঘটনার পরও শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতি নিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে আফসোসের জায়গা একমাত্র গবেষণার অভাব।

৫১ বছর বয়সে জাবি শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও অবকাঠামোতে অগ্রগতি করলেও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণায় এখনও অনেক পিছিয়ে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সূচক ওয়েবসাইট ‘স্কোপাস’ অনুসারে, ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক জার্নালে মাত্র ৩,৮৯৮টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে; প্রতি বছর গড়ে ৭৮টি।

এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা আন্তর্জাতিক জার্নালে উল্লেখ করার মতো নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত মাত্র ৭২টি গবেষণার অর্থায়ন করেছে, যার মধ্যে ৩৩টি গত বছর প্রকাশিত হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, গবেষণায় আগ্রহ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত তহবিল নেই। সম্প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজস্ব অর্থায়নে গবেষণা শুরু করেছেন।

জাবির পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন, যিনি আন্তর্জাতিক জার্নালে ৭২টি গবেষণা নিবন্ধে নাম পেয়েছেন, তিনি বলেছেন: “আমি আমার নিজের গবেষণা করি। একটি স্কোপাস হিসাবে, আমি ৭২ টি গবেষণা প্রকাশ করেছি। কিন্তু এর মধ্যে আমার ১০০ টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন গবেষণার জন্য ফান্ডিং বা অনার্সের কোন আগ্রহ দেখিনি।আমার মত আরো অনেকেই গবেষণায় আগ্রহী।কিন্তু ফান্ডিং এর অভাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও শিক্ষা ও গবেষণায় পিছিয়ে রয়েছে বলে জানান অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। প্রথমত, রাষ্ট্র বা সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কীভাবে দেখতে চায় তার উপর গবেষণা অনেকটাই নির্ভর করে। আমাদের দেশে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের সহায়তা গোষ্ঠী গঠনের কারখানা হিসাবে দেখে। দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে যতটা গবেষণার সুযোগ থাকা উচিত, উদ্যোগেরও অভাব রয়েছে। এছাড়া ৫০ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা নেই। তৃতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহীদের প্রাধান্য নিশ্চিত করা। কিন্তু এখানে যারা শিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী নন; তাদের শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। এ ধরনের ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করলে শিক্ষা ও গবেষণার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হক বলেন, এক কথায় অনেক কিছু পাওয়ার আছে। আজ জাহাঙ্গীরনগর ছোট থেকে বড় হয়ে উঠেছে। সব ক্ষেত্রে, এর আকার বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখান থেকে যারা শিখছে তারা বিদেশে ভালো করছে। আশা করি এই গতি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

শিক্ষা ও গবেষণার মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষকদের শিক্ষা ও গবেষণার মান দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটছে, যা গুণগত মান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। শিক্ষকরা অনেক মৌলিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। তবে সবগুলো আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হবে না। দেশেও ভালো মানের জার্নাল রয়েছে, যেখানে অনেক নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি আশাবাদী যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে। আমরা শুধু সংখ্যা দিয়ে এগিয়ে যেতে চাই না, আমরা অর্থ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা গবেষণার জন্য যে পরিমাণ অর্থায়ন প্রয়োজন তা বহন করতে সক্ষম নাও হতে পারে। তবে আমরা সেই সামর্থ্যের মধ্যে কাজ করার চেষ্টা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *