প্রভাবশালী দেশগুলোর সংসদে বাংলাদেশকে ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে: শফিকুল আলম

0

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও প্রভাবশালী দেশের সংসদে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় সহিংসতার অভিযোগ তদন্তের জন্য তিনি ধর্মনিরপেক্ষ সংবাদপত্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এসব কথা লিখেছেন।

শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কর্তৃক হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বিপ্লব-পরবর্তী হামলার প্রতিবেদন যখন নেত্র নিউজ প্রকাশ করে, তখন আমি আশা করেছিলাম ঐক্য পরিষদ এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেবে। নেত্র নিউজ একটি শীর্ষস্থানীয় অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট যা বাংলাদেশে বড় ধরনের দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদনের জন্য সুনাম অর্জন করেছে।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘নেত্র নিউজের রিপোর্টে দেখা গেছে যে সংখ্যালঘু কাউন্সিলের দ্বারা রিপোর্ট করা নয়টি হিন্দু মৃত্যুর প্রায় সবই রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত বা অন্যান্য কারণে যুক্ত ছিল, যা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছিল না। আমরা আশা করেছিলাম যে ঐক্য পরিষদ নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে সাড়া দেবে, কারণ এটি পরিষদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদনের পদ্ধতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

তিনি লিখেছেন, ‘এ বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে আরেকটি বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ঐক্য পরিষদ। তারা বলেছে যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (যা ১ জুলাই, ২০২৩ থেকে শুরু হয়েছিল) কমপক্ষে ৪৫ জন সংখ্যালঘু (অধিকাংশ হিন্দু) নিহত হয়েছে। আবার বাংলাদেশের সংবাদপত্রের সামনে ও পেছনের পাতায় প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। ঐক্য পরিষদের দাবির সত্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও কোনো গণমাধ্যমই তা চ্যালেঞ্জ করেনি।

শফিকুল আলম লিখেছেন যে দেশের সর্ববৃহৎ মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মতে, ২০২৩ সালে সংখ্যালঘু বিরোধী সহিংসতায় কেউ নিহত হয়নি এবং এ বছর (জানুয়ারি থেকে অক্টোবর) মাত্র দুজন নিহত হয়েছে।

তিলি লিখেছেন, ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এক ব্রিটিশ এমপি সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কথা বলতে গিয়ে ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করেছেন। হিন্দুদের উপর বিপ্লবোত্তর আক্রমণের প্রতিবেদনটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ১১ মিলিয়নেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি লিখেছেন, “আমাদের জানামতে, শক্তিশালী এবং ধনী আমেরিকান গোষ্ঠী, ভারতীয় জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং শীর্ষ ভারতীয় বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরতে এই প্রতিবেদনটি উদ্ধৃত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংখ্যালঘু বিরোধী সহিংসতা সম্পর্কে ভুল তথ্যের সবচেয়ে বড় উৎস ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদন।

শফিকুল আলম আরও লিখেছেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দিক থেকে আমরা এখনো মডেল দেশ হতে পারিনি। ধর্মীয়ভাবে আপত্তিকর ফেসবুক পোস্টও সহিংসতা সৃষ্টি করে। কিছু প্রান্তিক গোষ্ঠী এবং ব্যক্তি প্রায়ই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়।”

তিনি লিখেছেন, “সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ধর্মীয় ঘটনার সময় মানুষকে শান্ত রাখার জন্য আরও বেশি প্রচেষ্টা করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই ঘটনার সময় অসাধারণ রাজনৈতিক পরিপক্কতা দেখিয়েছেন।”

তিনি লিখেছেন, “কিছু লোক এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠানোর বা দেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে। “তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চায়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *